এক সময় ছিল যখন আয়নায় নিজের প্রতিফলনে চোখে পড়লে হালকা হাসি ফিরত মুখে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের রঙ বদলে গিয়ে সেই হাসিতে ছাপ ফেলছে বিবর্ণতা। আপনি কি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি? তাহলে জেনে রাখুন - এ সমস্যা আপনার একার নয়। দাঁতের হলদে বা কালচে রঙ এখন সাধারণ একটি উদ্বেগের নাম, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে।
সৌন্দর্যের অন্যতম বড় চিহ্ন এই ঝকঝকে সাদা দাঁত। আর এটি শুধু চেহারার সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাস আর সামাজিক উপস্থিতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুখবর হলো- দাঁতের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফেরাতে আজকাল হাতে রয়েছে দুই পথ : কিছু কার্যকর ঘরোয়া কৌশল এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
চলুন প্রথমেই জেনে নিই দাঁতের রঙ কেন বদলে যায়?
দাঁতের বিবর্ণতার কারণ অনেক। এর পেছনে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাসই মূলত দায়ী- বলছেন ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইমরান হোসেন।
মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- নিয়মিত চা, কফি, কোলা জাতীয় পানীয় সেবন
- ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ
- অপর্যাপ্ত ব্রাশিং এবং জিভ না পরিষ্কার করা
- বয়স বৃদ্ধির কারণে এনামেল ক্ষয়
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহণ
ঘরোয়া উপায়ে দাঁত উজ্জ্বল করার কিছু কার্যকর কৌশল
আপনার রান্নাঘরেই আছে এমন কিছু উপাদান, যা দিয়ে দাঁতের প্রাকৃতিক রঙ কিছুটা হলেও ফেরানো সম্ভব।
বেকিং সোডা ও লেবুর রস : সপ্তাহে ১-২ বার সামান্য বেকিং সোডা ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দাঁতে ঘষে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নারকেল তেল দিয়ে কুলি (Oil Pulling) : প্রতিদিন সকালে ৫-১০ মিনিট মুখে নারকেল তেল রেখে কুলি করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে এবং দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
অ্যাক্টিভেটেড চারকোল : বাজারে পাওয়া যায় এমন চারকোল পাউডার দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাগ হালকা হতে পারে। তবে এটি নিয়মিত ব্যবহার না করাই ভালো।
স্ট্রবেরি পেস্ট : পাকা স্ট্রবেরি পিষে দাঁতে লাগালে প্রাকৃতিকভাবে দাঁতের রঙ উজ্জ্বল হয়।
সতর্ক থাকুন : এই সব উপায় ব্যবহারে বেশি ঘষাঘষি করলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই যত্ন নিন, কিন্তু অতি উৎসাহী হবেন না।
আধুনিক চিকিৎসায় দাঁতের উজ্জ্বলতা ফেরানো এখন সহজ
যদি ঘরোয়া উপায়গুলোতে সন্তুষ্ট না হন বা দ্রুত ফল চান, তাহলে পেশাদার চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। নিচে কিছু জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানালেন ডা. ইমরান।
স্কেলিং ও পলিশিং : এটি দাঁতের উপরের দাগ ও প্লাক দূর করার সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়। এক সেশনেই মুখে ফিরে আসে ফ্রেশ লুক।
টিথ ব্লিচিং : বিশেষ রাসায়নিক প্রয়োগে দাঁতের গভীর দাগ দূর করা হয়। এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা হয় এবং ফলাফল বেশ দীর্ঘস্থায়ী।
লেজার হোয়াইটেনিং : আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত দাঁত সাদা করার নিরাপদ পদ্ধতি।
ভেনিয়ার বা লেমিনেট : যাদের দাঁতের গঠন বা রঙ স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের প্রয়োজন, তাদের জন্য উপযুক্ত। পাতলা সিরামিক শেল দাঁতের ওপর বসিয়ে রঙ ও আকৃতি ঠিক করা হয়।
চিকিৎসা নেওয়ার আগে যেগুলো জানা জরুরি
দাঁত সাদা করার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার:
- একজন অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- গর্ভবতী নারীদের জন্য কিছু পদ্ধতি নিরাপদ নয়
- যদি দাঁতে সংক্রমণ, ক্যাভিটি বা রুট ক্যানেল থাকে আগে তা ঠিক করান
- অতিরিক্ত সাদা করার চেষ্টা দাঁতের ক্ষতি করতে পারে
দাঁতের যত্নে সচেতন হোন, হাসি ফিরে পাবেন
দাঁতের রঙে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। তবে যখন তা অতিরিক্ত দাগযুক্ত বা বিবর্ণ হয়, তখন প্রয়োজন চিকিৎসা। ঘরোয়া যত্নের পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসার সহায়তায় ফিরে আসতে পারে আপনার সেই উজ্জ্বল, আত্মবিশ্বাসী হাসি।
শেষ কথা, মুখের সৌন্দর্য শুধু সাদা দাঁত নয়- স্বাস্থ্যবান দাঁতও জরুরি। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস আর চিকিৎসকের চেকআপই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ।
তথ্য দিয়েছেন : ডা. মো. ইমরান হোসেন
চিফ কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল ভিউ অর্থোডন্টিকস অ্যান্ড ইমপ্ল্যান্ট সেন্টার, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ই-মেইল: [email protected]
মন্তব্য করুন