আপনি কি পাশ ফিরে ঘুমান, নাকি সোজা হয়ে? সাধারণ এই ঘুমের অভ্যাস ভঙ্গিই প্রভাব ফেলতে পারে শরীরের। হজমক্রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান—সবকিছুই নির্ভর করে ঘুমাচ্ছেন তার ওপর। ফলে সঠিক ঘুমের ভঙ্গি জানাটা শুধু আরাম নয়, দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে ঘুমের সঠিক ভঙ্গির সঙ্গে সুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে।
তাহলে ঘুমের সঠিক ভঙ্গি কোনটি?
পাশ ফিরে ঘুমানো বেশিরভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ভঙ্গি। এই ভঙ্গিতে ঘুমালে শ্বাসকষ্ট কমে যায়। মেরুদণ্ড সঠিকভাবে সাপোর্ট পায়। অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা ঘুমের সময় শ্বাসরোধের ঝুঁকিও কমে। তবে দীর্ঘদিন একই পাশে ঘুমালে কাঁধ বা কোমরে চাপ পড়তে পারে। এতে অস্বস্তি তৈরি হয় এবং মুখে বলিরেখাও দেখা দিতে পারে। তাই পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো হলেও মাঝেমধ্যে দিক বদল করাও জরুরি।
অন্যদিকে চিত হয়ে ঘুমালে মাথা, ঘাড় ও মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে। এতে জয়েন্টের ওপর চাপ কম পড়ে। মুখে বলিরেখাও তুলনামূলক কম দেখা দেয়। তবে এই ভঙ্গিতে ঘুমালে অনেকের শ্বাসরোধ বা নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগা রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্যও চিত হয়ে ঘুমানো নিরাপদ নয়। কারণ এতে গর্ভে রক্তপ্রবাহ কমে যেতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসে কোন দিকে পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, এক গবেষণায় ১০ ব্যক্তির ওপর দুদিন ধরে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম দিনে, অংশগ্রহণকারীরা উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ডান দিকে ফিরে বিশ্রাম নেন। পরদিন তারা বাঁ দিকে ফিরে ঘুমান। গবেষণায় দেখা যায়, ডান দিকে ঘুমালে বুক জ্বালাপোড়া ও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বেড়ে যায়। এর ফলে গবেষকরা মনে করেন, বাঁ দিকে ঘুমানো শরীরের জন্য বেশি উপকারী।
এ ছাড়া বাঁ কাত হয়ে ঘুমানো হজম প্রক্রিয়াতেও সহায়ক হতে পারে। কারণ, ক্ষুদ্রান্ত্রের নিচের ডান পাশে অবস্থিত ইলিওসেকাল ভালভের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ বৃহৎ অন্ত্রে যায়। বাঁ দিকে শোওয়ার ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এই স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। ফলে নিয়মিত মলত্যাগে এটি ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো ঘুমের ভঙ্গি কোনটি?
১. কোমরের ব্যথায় ভুগলে পাশে বা চিত হয়ে ঘুমানো উপকারী। তবে পাশে ঘুমানোর সময় হাঁটুর মাঝে একটি বালিশ রাখলে মেরুদণ্ড সঠিকভাবে সাপোর্ট পায় এবং ব্যথা কমে।
২. ঘাড়ে ব্যথা থাকলে চিত বা পাশে ঘুমানো ভালো। পাশে হয়ে ঘুমালে মোটা বালিশ আর চিত হয়ে শোওয়ার সময় পাতলা বালিশ ব্যবহার করা উচিত।
৩. শ্বাসকষ্ট বা নাক ডাকার সমস্যা থাকলে পাশে হয়ে ঘুমানো উচিত। পেটের ওপর ঘুমালে পেলভিসের নিচে বালিশ এবং মাথার নিচে পাতলা বালিশ রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৪. অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ক্ষেত্রে বাঁ দিকে ফিরে ঘুমানো বেশি কার্যকর।
৫. গর্ভাবস্থায় পাশে হয়ে ঘুমানো ভালো। এ সময় বডি পিলো বা ওয়েজ বালিশ ব্যবহার করলে আরাম বাড়ে।
৬. সাইনাস কনজেশনের সময় চিত হয়ে শোওয়া উচিত এবং মাথা একটু উঁচু করে রাখলে তরল নির্গমনে সুবিধা হয়।
৭. এ ছাড়া নিতম্ব বা হাঁটুর ব্যথা থাকলে চিত হয়ে শুয়ে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কম পড়ে।
ঘুম কেবল বিশ্রামের মাধ্যম নয়, এটি শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ঘুমের ভঙ্গি প্রভাব ফেলে সারাদিনের শক্তি, হজম, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর। তাই ঘুমানোর ধরন নির্বাচন করার সময় নিজের শারীরিক অবস্থান এবং প্রয়োজন বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি আরামদায়ক বিছানা ও সঠিক উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করা ভালো ঘুম এবং সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘুম থেকে ওঠার সময় তুমি স্বস্তি এবং সতেজ বোধ করো কি না।
মন্তব্য করুন