বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই ধূমপান এক ভয়ংকর আসক্তি। প্রতিদিন লাখো মানুষ ধূমপান করেন। এই ধূমপানের ধোঁয়া সরাসরি ফুসফুসে আঘাত করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতা দুর্বল করে। এতে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা কিংবা ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়। চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করে বলছেন, ধূমপান হলো ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।
কিন্তু আশার কথা হলো, ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীর ধীরে ধীরে আবার সুস্থ হওয়ার সুযোগ পায়। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্ষতি সবসময় স্থায়ী হয় না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন শরীরকে নিজস্ব শক্তি ফিরে পেতে সহায়তা করে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, কোনো খাবারই বছরের পর বছর ধূমপানের ক্ষতি পুরোপুরি মুছে দিতে পারে না। বরং কিছু নির্দিষ্ট খাবার প্রদাহ কমিয়ে, ফুসফুসকে পরিশুদ্ধ করে এবং শরীরের প্রাকৃতিক আরোগ্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
সম্প্রতি ভারতীয় পালমোনোলজিস্ট ডা. সোনিয়া গোয়েল এক ভিডিও বার্তায় ধূমপান-পরবর্তী ফুসফুসের যত্নে ৫টি বিশেষ খাবারের কথা জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ধূমপান ছাড়াই প্রথম ধাপ, কিন্তু এরপর খাদ্যতালিকায় সঠিক খাবার যুক্ত করলে সুস্থ হওয়ার গতি বহুগুণে বেড়ে যায়।
চলুন, জেনে নিই সেই ৫ খাবারের নাম ও তাদের কার্যকারিতা—
ক্রুসিফেরাস সবজি
ব্রোকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজিতে আছে সালফোরাফেন নামক যৌগ। এটি ফুসফুসের ডিটক্স এনজাইম সক্রিয় করে, যা সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
বিট ও ডালিম
বিট ও ডালিমে প্রচুর নাইট্রেট থাকে। এটি ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। ধূমপায়ীদের শরীরে যে অক্সিজেন ঘাটতি তৈরি হয়, এই দুটি ফল তা কাটাতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যাটেচিন। এটি ফুসফুসের প্রদাহ কমায়, পাশাপাশি সিওপিডি ও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। শুধু ফুসফুস নয়, গ্রিন টি ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক সতেজতাতেও কার্যকর।
আপেল ও সাইট্রাস ফল
আপেলের কোয়েরসেটিন ও সাইট্রাস ফলে থাকা ভিটামিন সি ফুসফুসের কোষ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব ফল নিয়মিত খেলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিদের শ্বাসনালীর কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।
হলুদ
হলুদে থাকা কারকিউমিন হলো শক্তিশালী প্রদাহনাশক ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই সোনালি মসলা শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু দ্রুত মেরামতে সহায়তা করে।
শেষকথা
ডা. সোনিয়া গোয়েল মনে করিয়ে দেন, ফুসফুস সুস্থ রাখার প্রথম শর্ত হলো ধূমপান ত্যাগ করা। এরপর সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম ফুসফুসকে নতুন শক্তি দেয়। তাই সিগারেট ছেড়ে প্রকৃতির দান এই খাবারগুলোকে প্লেটে রাখুন, শরীরে ধীরে ধীরে ফিরবে নতুন শক্তি।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন