দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
দীর্ঘদিন পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলায় তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত নেতাদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সম্মেলন শুরু হবে সকাল ১১ টায়। সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। প্রধান বক্তা বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। অতিথি সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ।
তবে এ সম্মেলনের ব্যানার ও দাওয়াতপত্রে কিশোরগঞ্জের আলোচিত নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাকে সম্মেলনে অতিথি করাও হয়নি।
গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে ফজলুর রহমানকে তিন মাসের জন্য দলীয় সব পদ থেকে স্থগিত করা হয়।
এর আগে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
এদিকে সম্মেলনে নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে আট বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে আসবেন, আর আমি ঢাকায় বসে থাকব? যে দলের জন্য আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, সেখানে কেউ আমাকে সম্মেলনে আসতে বলতে পারবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সম্মেলন ঘিরে তোরণে তোরণে সেজেছে পুরো শহর। অলি-গলিতে ব্যানার, ফেস্টুনে সাজসজ্জা করা হয়েছে। শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে সভাপতি ও সম্পাদকের পদ। ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন উপ-কমিটি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপি’র ২১টি ইউনিটের ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সভাপতি পদে ২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব বাছাইয়ের এই আয়োজনকে স্বাগত জানালেও, কার হাতে যাবে জেলার দায়িত্ব—তা নিয়ে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
শীর্ষ পদগুলোতে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের মধ্যে গত ১৭ বছর ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের প্রতি তৃণমূলের ঝোঁক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্বে চলতে থাকা সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা আসার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। এ কারণে পুরনো নেতৃত্বের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে নতুন মুখকে সুযোগ দেওয়া ও এক নেতার এক পদ চাই সাধারণ কর্মীরা।
সভাপতি পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি শরীফুল আলম, সহসভাপতি রুহুল হোসাইন। সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, নিকলী উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ, শফিকুল ইসলাম রাজন।
বিএনপি কর্মী এম এ হাসান বাবুল বলেন, সম্মেলনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সকলেই যোগ্য। কিন্তু বিএনপি’র গঠনন্ত্র অনুযায়ী একনেতার এক পদ থাকার কথা থাকলেও অনেক পদ নিয়ে বসে আছেন। তাই এক নেতার এক পদ চাই আমরা। তাতে দল সমৃদ্ধ হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। কাউন্সিলরদের কাছে দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার দাবি জানাই। আসা করি ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবে।
যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন বলেন, ৯ বছর আগেও আমরা দেখেছি জেলা বিএনপি’র মধ্যে বিভক্ত ছিল। সভাপতি একদিকে সাধারণ সম্পাদক অন্যদিকে। কিশোরগঞ্জ শহরে অস্ত্রের ঝনঝনানি ও সন্ত্রাসের আখড়া ছিল। আমরা দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি ও সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে রাজপথে ছিলাম। তাদের ত্যাগ রয়েছে। নতুন অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন তাদের অনেককেই আমরা রাজপথে পায়নি। পুরাতন নেতৃত্বের কাছে আস্থা রাখতে চাই।
সম্মেলনে প্রস্তুতি নিয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, ২১টি ভোট কেন্দ্র থাকবে। ১৩ উপজেলা ও ৮ টি পৌরসভার আলাদা ভোটকেন্দ্র থাকবে। স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। দীর্ঘদিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন হচ্ছে। সারা শহর আশা করছি জনসমুদ্রে পরিণত হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সম্মেলনের মঞ্চ ও পেন্ডেল তৈরির কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। যথাসময়ের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে, রক্ত দিয়েছে। দলের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চর্চা সেই চর্চাটা করার জন্যই দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন