বিশ্বে দীর্ঘায়ুর দিক থেকে জাপান বারবার নজর কাড়ছে। দেশটিতে বর্তমানে শতবর্ষীর সংখ্যা প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে, যাদের বড় অংশই নারী। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সচেতন খাদ্যাভ্যাসকে এই দীর্ঘায়ুর মূল রহস্য হিসেবে দেখা হয়। প্রশ্ন হলো আমরাও কি জাপানিদের মতো শত বছর বাঁচতে পারি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সহজ জীবনধারা অনুসরণ করলেই তা সম্ভব।
প্রথমত, খাদ্যাভ্যাস। জাপানিরা দৈনন্দিন খাবারে মাছ, শাকসবজি, সয়াবিনজাত খাবার ও ভাতকে প্রাধান্য দেন। লাল মাংস ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় খুব সীমিত। পাশাপাশি চিনি ও লবণের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রিত। এ অভ্যাস হৃদরোগ, ডায়াবেটিস কিংবা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে, নারীদের মধ্যে স্থূলতার হার অনেক কম, যা তাদের আয়ুষ্কাল পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।
দ্বিতীয়ত, সক্রিয় জীবনধারা। জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনে হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণপরিবহনের ব্যবহার, সাইকেল চালানো কিংবা নিয়মিত হাঁটা—এসব তাদের ফিট রাখে। জনপ্রিয় ‘রেডিও তাইসো’ নামের তিন মিনিটের শরীরচর্চা এখনো হাজারো মানুষ প্রতিদিন দলবদ্ধভাবে করে থাকেন। এতে শরীরচর্চার পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হয়।
তৃতীয়ত, মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক বন্ধন। জাপানি সমাজে পরিবার ও কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় থাকে। একাকীত্ব কম থাকায় মানসিক চাপও কমে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মনোভাব ও সামাজিক সম্পৃক্ততা মানুষের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
চতুর্থত, সরকারি উদ্যোগ ও জনস্বাস্থ্য নীতি। জাপান সরকার বহু বছর ধরে খাদ্যাভ্যাসে লবণ কমানো, স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা চালু রেখেছে। এর সুফল এখন দেশের গড় আয়ুষ্কালে স্পষ্ট।
তবে দীর্ঘায়ু শুধু খাবার বা ব্যায়ামের ওপর নির্ভর করে না। জীবনযাপনে নিয়মিততা, মানসিক প্রশান্তি, প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য ও পরিমিত জীবনধারা—সব মিলিয়ে জাপানিরা শতবর্ষী হওয়ার গোপন রহস্য তৈরি করেছে।
অতএব, আপনি যদি দীর্ঘ জীবন চান, তবে আজ থেকেই শুরু করুন। খাদ্যতালিকায় শাকসবজি ও মাছ বাড়ান, লবণ-চিনি কমান, নিয়মিত হাঁটুন এবং সবচেয়ে বড় কথা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। হয়তো আমরাও একদিন জাপানিদের মতো শত বছর বাঁচতে পারব।
মন্তব্য করুন