নেপালের জেন-জি বিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। দেশের সংবিধান দিবসে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন তিনি। পোস্টে অলি বিক্ষোভের সহিংস রূপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং নেপালের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, অস্থিরতাকে একটি ‘বিকৃত কাল্পনিক বিবৃতি’ দ্বারা ইন্ধন জোগানো হয়েছে, যা তরুণদের ভুল পথে চালিত করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেপাল পুলিশের কাছে কোনো ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠে, জেন-জিদের আন্দোলনে গুলি ছুড়ল কারা?
অলি জানিয়েছেন, বিক্ষোভটি প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ‘ষড়যন্ত্রকারীরা’ বিক্ষোভে প্রবেশ করলে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেন-জিদের বিক্ষোভে ষড়যন্ত্রকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এরাই সহিংসতা সৃষ্টি করে এবং আমাদের যুবকদের হত্যা করে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য পুলিশকে কোনো আদেশ দেয়নি। পুলিশের কাছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও ছিল না। অলি দাবি করেছেন, ‘স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালানোর ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। নিহত তরুণদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার বিরোধীদেরও দোষারোপ করে বলেছেন, তারা নেপালের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন, পদত্যাগের পর দেশব্যাপী অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তিনি সতর্ক করে লিখেছেন, ‘সিংহ দরবার (পার্লামেন্ট) জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, নেপালের মানচিত্র পুড়িয়ে দেশের প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা, আদালত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পুড়ে ছাই করা হয়েছে।’
অলি বিক্ষোভের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই বিক্ষোভ নেপালকে পুনর্গঠনের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত হয়েছে। আমাদের দেশ কি গড়া হচ্ছিল, নাকি নষ্ট করা হচ্ছিল, নাকি এটি কেবল একটি বিকৃত কাল্পনিক বিবৃতির মাধ্যমে ছড়ানো ক্ষোভ ছিল?’
শেষে তিনি নেপালের সব প্রজন্মকে সংবিধান ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অলি বলেছেন, ‘যদি সার্বভৌমত্ব আমাদের অস্তিত্ব হয়, তবে সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার ঢাল। কেবল আমাদের ঐক্যই এই সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারে।’
তিনি অতীতের উদাহরণ টেনে বর্তমান অস্থিরতার প্রভাবের সতর্কবার্তা দিয়েছেন। অলি লিখেছেন, ‘বাস্তবতার বাইরে গিয়ে প্রসারিত অসন্তোষের ফলাফল কেবল অনুশোচনার কারণ হয়ে থাকে।’
উল্লেখ্য, পদত্যাগের পর অলি ৯ সেপ্টেম্বর নেপাল সেনাবাহিনীর ব্যারাকে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেনা সূত্রের মতে, পদত্যাগের পর তিনি ৯ দিন সামরিক সুরক্ষায় ছিলেন। ভারতের পিটিআই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে অলির সঠিক অবস্থান এখনো গোপন রাখা হয়েছে।
মন্তব্য করুন