ভরপেট খাওয়ার পর আমাদের অনেকের অভ্যাস হলো চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকা কিংবা সরাসরি বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া। মনে হয় বিশ্রাম নিলে শরীর ভালো থাকবে। কিন্তু আসলে দৃশ্যটা উল্টো। খাবার শেষে যদি মাত্র ২ থেকে ৫ মিনিট হাঁটা যায়, তবে শরীরের জন্য মিলতে পারে অবিশ্বাস্য উপকার।
স্পোর্টস মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, খাওয়ার পর সামান্য হাঁটাচলাও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
গবেষকরা দেখেছেন, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার বদলে দাঁড়িয়ে থাকলে গ্লুকোজের মাত্রা গড়ে প্রায় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে যায়। আর যদি সেই সময় হালকা হাঁটা হয়, তবে কমে যায় প্রায় ১৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিকের গবেষক এইডান বাফির ভাষায়, ‘দিনভর কিংবা খাওয়ার পর মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।’
কেন জরুরি এই হাঁটা?
খাওয়ার ৬০ থেকে ৯০ মিনিটের মধ্যেই রক্তে শর্করা সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে। তখন শরীর নড়াচড়া করলে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ে এবং ধীরে কমে। ফলে ইনসুলিনের ওঠানামাও নিয়ন্ত্রিত থাকে। ইনসুলিন দ্রুত বাড়া-কমা শুরু করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরচর্চার সময় পেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ টেনে নেয়। তাই খেলোয়াড়রা দৌড়ের আগে কার্বোহাইড্রেট খান— যা আমরা ‘কার্বো লোডিং’ নামে জানি।
গবেষণার ফলাফল
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দিনে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পর ২ থেকে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফলাফল বলছে, যারা নিয়মিত হেঁটেছেন, তাদের রক্তে শর্করার ওঠানামা অনেক ধীর হয়েছে এবং ইনসুলিন ব্যবহারের স্থিতিশীলতাও বজায় ছিল।
দীর্ঘমেয়াদি উপকার
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিট হাঁটার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে কমিয়ে দেয় নানারকম অসুস্থতার ঝুঁকি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারও এড়িয়ে চলা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন CDC জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়াম আর সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পেশি শক্ত করার অনুশীলন করলে যে কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
শেষকথা
খাওয়ার পর আর অলস ভঙ্গিতে বসে থাকবেন না। দাঁড়ান, হাঁটুন। মাত্র ২ মিনিট হলেও যথেষ্ট। এই ছোট্ট অভ্যাসই আপনাকে উপহার দিতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সুস্বাস্থ্য।
সূত্র : দ্য ওয়াল ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন