ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এতে চুল-দাড়ি কাটা ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং স্থানীয় সহযোগী কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় এ মামলা করেন।
জানা গেছে, হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন এই চুল কাটার কাজ করে। তারা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে এসে এ কাজ করে।
ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ বলেন, ‘ওইদিন আমি বাজারে গেলে তারা আমাকে জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দিয়েছে। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনো আল্লাহর কাছে বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় এখন আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।’
তিনি বলেন, ‘আমার চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুজন লোকসহ ৮ থেকে ৯ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন ও মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় আছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে, আমার মান-ইজ্জত মারছে। আমি বিচার চাই।’
হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে। স্থানীয়রা তাকে হালিম ফকির নামে চেনেন। হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক রোগী নন। তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে তাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকে তিনি বেশভূষায় বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল-দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে জট ছিল তার মাথায়।
সংসার জীবনে হালিম উদ্দিনের ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। একসময় কৃষক ছিলেন। ধীরে ধীরে ফকিরি হালে চলে আসেন। টুকটাক কবিরাজিও করেন। এলাকায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার আচরণ ও চলাফেরা। আছে হাট-বাজারেও যাতায়াত। নিজের মতো চলতেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীর কোনো অভিযোগ ছিল না। গত কোরবানি ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তার দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেয়।
ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, হালিম উদ্দিন কাদেরিয়া নকশবন্দিয়া অনুসারী। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব করে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান বলেন, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের। তবে সম্প্রতি ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানার পর আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দের ছেলে শহীদ আকন্দ এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছেন। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম ও পরিচয় এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন