

দিনটা ভালো করতে হলে নাশতা বা ব্রেকফাস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালে আমরা যা খাই, সেটাই আমাদের শক্তি, মনোযোগ এবং সারাদিনের কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই নাশতায় এমন খাবার বেছে নেওয়া ভালো যেগুলো পুষ্টিকর, পেট ভরা রাখে এবং সহজেই তৈরি করা যায়।
একটি ভালো নাশতায় সাধারণত প্রোটিন, ফাইবার এবং নানা ধরনের পুষ্টি থাকা দরকার। সকালে স্বাস্থ্যকর কিছু খেতে চাইলে ডিম, হোল হুইট টোস্ট, বাদাম, গ্রিন টি ইত্যাদি সহজ বিকল্প বেছে নিতে পারেন। পুষ্টিকর নাশতা আপনাকে দীর্ঘ সময় শক্তি দেয় এবং পেট ভরা অনুভব করায়।
আরও পড়ুন : নাশতা বাদ দেওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, কী বলছে গবেষণা
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্য, ত্বক ও ঘরের যত্নে ছোট্ট জাদু ‘আদা’
অনেক বাজারজাত নাশতায় কিন্তু চিনি, প্রক্রিয়াজাত কার্ব আর কেমিক্যালে ভরা থাকে। তাই পুরো দানা বা প্রাকৃতিক খাবার বেছে নেওয়াই নাশতার জন্য ভালো।
চলুন সকালে খাওয়ার জন্য ১২টি খাবার ও পানীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস, যা পেশি গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নাশতায় ডিম ও টোস্ট খেয়েছেন, তারা সিরিয়াল খাওয়া লোকদের তুলনায় অনেক কম ক্ষুধা অনুভব করেছেন। ডিম খেলে দুপুরের খাবারও কম খাওয়া হয়।
ডিমে আছে- লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন (চোখের জন্য ভালো), কোলিন (মস্তিষ্ক ও লিভারের জন্য দরকারি), বি ভিটামিন, ভিটামিন এ, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ।
আগের ধারণার বিপরীতে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ডিম রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না। ডিম খেতে পারেন হোল গ্রেইন টোস্ট, ফল বা রান্না করা সবজির সঙ্গে।
গ্রিক দই সাধারণ দইয়ের চেয়ে বেশি প্রোটিনযুক্ত এবং কম ক্যালরিযুক্ত। এক কাপ দইয়ে থাকে প্রায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন কিন্তু মাত্র ৯২ ক্যালরি।
এতে আরও থাকে - ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, জিংক, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। অনেক গ্রিক দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকে, যা হজমে সাহায্য করে। আরও ক্রিমি চাইলে স্কিয়র (Icelandic yogurt) ট্রাই করতে পারেন।
গ্রিক দইয়ের সঙ্গে বেরি, বাদাম বা ওটস যোগ করলে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বাড়ে।
কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরকে চাঙা করে এবং মনোযোগ বাড়ায়। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে ৩–৪ কাপ কফি নিরাপদ।
চেষ্টা করুন কালো কফি বা দুধ দিয়ে পান করার। চিনি বা মিষ্টি সিরাপ কম ব্যবহার করুন।
ওটস থেকে তৈরি ওটমিলে থাকে বিটা-গ্লুকান নামে এক ধরনের ফাইবার, যা কোলেস্টেরল ও রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে। ওটমিল খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে।
ওটসে থাকে- আয়রন, বি ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও সেলেনিয়াম। এক কাপ শুকনো ওটসে থাকে প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিন। প্রোটিন বাড়াতে দুধ দিয়ে বানাতে পারেন বা ডিমের সঙ্গে খেতে পারেন।
গ্লুটেন না খেতে পারলে সনদপ্রাপ্ত গ্লুটেন-ফ্রি ওটস বেছে নিন।
চিয়া সিড ফাইবারের দারুণ উৎস। এক আউন্স চিয়া সিডে প্রায় ১০ গ্রাম ফাইবার থাকে। এই ফাইবার পানি শোষণ করে পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে, কোলেস্টেরল কমাতে ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। চিয়া সিডে প্রোটিন কম, তাই গ্রিক দই, প্রোটিন শেক বা কটেজ চিজের সঙ্গে খেলে ভালো।
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্ল্যাকবেরি - সবই কম ক্যালরিযুক্ত, বেশি ফাইবারযুক্ত এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এগুলোর অ্যান্থোসায়ানিন শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং হৃদরোগ, ক্যানসার ও টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
গ্রিক দই, ওটমিল, চিয়া পুডিং বা স্মুদির সঙ্গে বেরি খুব ভালো লাগে।
এক কাপ কম–ফ্যাট কটেজ চিজে থাকে প্রায় ২৪ গ্রাম প্রোটিন। তাই এটি অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। এটি কম ক্যালরিযুক্ত, তাই ওজন কমাতে চাইলে ভালো বিকল্প।
এটি খেতে পারেন- বেরি, পীচ, টমেটো, শসা, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড বা গ্র্যানোলার সঙ্গে।
হোল গ্রেইন বা পুরো দানার রুটি ফাইবার ও জটিল কার্বে ভরপুর। এগুলো ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে চিনি হঠাৎ বাড়ে না এবং পেট ভরা থাকে।
টোস্টের ওপর রাখতে পারেন- ডিম ও টমেটো, অ্যাভোকাডো ও চিলি ফ্লেক্স, পিনাট বাটার ও কলা, কটেজ চিজ ও স্ট্রবেরি, ফিগ ও মধু, টুনা, চিকেন
আরও পড়ুন : কিডনির ওপর অতিরিক্ত লবণের প্রভাব জানালেন চিকিৎসক
আরও পড়ুন : ৩০ দিন ভাত-রুটি ছাড়লে যে পরিবর্তন আসবে
বা বেকড বিনস। স্প্রাউটেড গ্রেইন ব্রেড হলে আরও ভালো, কারণ এতে বেশি প্রোটিন ও ফাইবার থাকে।
বাদামে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভালো ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবারের কারণে বাদাম পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তবে বাদাম ক্যালরিযুক্ত, তাই বেশি না খাওয়াই ভালো।
দই, ওটমিল বা কটেজ চিজের ওপর বাদাম ছড়িয়ে খেলে পুষ্টি বাড়ে।
গ্রিন টিতে কফির তুলনায় কম ক্যাফেইন থাকে, তাই এটি হালকা উদ্দীপক। এতে থাকে L-theanine, যা মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং ক্যাফেইনে ঘাবড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমায়।
এতে থাকা EGCG অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্মৃতিভ্রংশসহ কিছু স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
স্মুদি খুব সহজ এবং দ্রুত তৈরি হয়। পানি, দুধ বা নন-ডেয়ারি দুধের সঙ্গে কলা, বেরি, বাদাম, পালংশাক বা পছন্দের ফল - সবজি ব্লেন্ড করলেই হয়ে যায়।
প্রোটিন পাউডার যোগ করলে আরও পেট ভরা ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্রেকফাস্ট হয়। সকালে ব্যায়াম করলে পরে স্মুদি পান করা দারুণ হতে পারে।
ফল হালকা, সহজ এবং দ্রুত খাওয়া যায়। সব ফলেই থাকে ফাইবার, ভিটামিন–মিনারেল এবং প্রাকৃতিক চিনি, যা ধীরে শক্তি দেয়।
পটাসিয়াম বেশি থাকে কলা, কমলা, ক্যান্টালুপ, পেপে ও আমে।
ভিটামিন সি বেশি থাকে কমলা, পেয়ারা, কিউই, স্ট্রবেরি, পেপে ও লিচুতে।
ফলের রং অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যেমন, পেয়ারায় লাইকোপেন বেশি, বেগুনি বরইয়ে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে। ফল ও সবজি বেশি খেলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। যদি সম্ভব হয়, জুসের পরিবর্তে পুরো ফল খান, কারণ পুরো ফলে বেশি ফাইবার থাকে।
চাইলে ফল খেতে পারেন ডিম, গ্রিক দই বা কটেজ চিজের সঙ্গে।
নিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ এবং পেট ভরা রাখে এমন খাবার ভালো। যেমন - ডিম, ফল, বাদাম, স্মুদি, হোল গ্রেইন টোস্ট।
প্রোটিন ও ফাইবার বেশি খাবেন। যেমন - কটেজ চিজ, গ্রিক দই ও ডিম। এর সাথে খেতে পারেন ওটস, হোল গ্রেইন ব্রেড, ফল আর পান করুন চিনি ছাড়া পানি, গ্রিন টি বা কফি।
- সবজি দিয়ে অমলেট
- গ্রিক দই + বেরি + বাদাম + বীজ
- স্টিল-কাট ওটস + আপেল + দারুচিনি + প্রোটিন
- হোল গ্রেইন টোস্ট + অ্যাভোকাডো বা পিনাট বাটার
- কলা + প্রোটিন + বেরি + পালং + চিয়া সিড স্মুদি
- অতিরিক্ত চিনি ও কম ফাইবারযুক্ত সিরিয়াল
- প্যাস্ট্রি ও সাদা রুটি
- বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার (সসেজ, বেকন)
- বাজারের চিনি মেশানো জুস
আরও পড়ুন : ব্রণ কমাতে আপেল কি সত্যিই কাজ করে, জানুন চিকিৎসকের মত
আরও পড়ুন : ৭ অভ্যাসে মাত্র ৫০ দিনেই বদলে যেতে পারে আপনার জীবন
একটি পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট আপনাকে দিন ভালোভাবে শুরু করতে সাহায্য করবে। ভালো বিকল্প হলো যেসব খাবারে ফাইবার, প্রোটিন, ভালো ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ বেশি থাকে।
অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার খুব সহজ ও দ্রুত তৈরি করা যায়। যেমন - ডিম, গ্রিন টি, কফি, স্মুদি, হোল গ্রেইন টোস্ট। সময় না পেলে ফল বা ওভারনাইট ওটসও চলতে পারে।
সূত্র: হেলথলাইন
মন্তব্য করুন