আমরা অনেকেই আছি যারা একটা টুথব্রাশ কিনে মাসের পর মাস ব্যবহার করি—যতক্ষণ না ব্রাশটা একদম জীর্ণ বা অচল হয়ে পড়ে। ভাবি, ‘আরে, এটা তো এখনো ঠিকঠাক কাজ করছে!’ কিন্তু জানেন কি, পুরোনো টুথব্রাশ দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলেও দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না, উল্টো কিছু ক্ষতিও হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ব্যবহারে টুথব্রাশের ব্রিস্টল (লোমগুলো) নরম হয়ে যায়, বেঁকে যায়, আর তখন সেটি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। শুধু তাই নয়, পুরোনো ব্রাশে জমে থাকতে পারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, যা দাঁত ও মাড়ির জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
চলুন, জেনে নিই টুথব্রাশ অনেক দিন ধরে ব্যবহার করলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কখন সেটা বদলানো উচিত।
দাঁত পরিষ্কারের কার্যকারিতা কমে যায় : নিয়মিত ব্যবহারে ব্রাশের ব্রিস্টলগুলো বাঁকা ও দুর্বল হয়ে যায়, যাকে বলে ব্রিস্টল ফ্লেয়ারিং। একবার ব্রিস্টল ফ্লেয়ার করলে দাঁতের কোনা-উপকোণে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না, ফলে দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৪০ দিন একই ব্রাশ ব্যবহার করলে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়ার আস্তানা হয়ে যেতে পারে : পুরোনো ব্রাশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া জমে। শুধু পানি দিয়ে ধুলে এসব জীবাণু দূর হয় না। এই ব্যাকটেরিয়া দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন, মুখে দুর্গন্ধ বা অন্যান্য অসুস্থতা তৈরি করতে পারে।
মুখে সংক্রমণ ছড়াতে পারে : দাঁতে ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, মুখে ঘা—এসব সমস্যা হঠাৎ শুরু হলে আপনার টুথব্রাশই হতে পারে কারণ। অনেকেই খেয়াল না করে মাসের পর মাস এক ব্রাশ চালিয়ে যান, যা মুখের ভেতর জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।
ব্রাশের ক্ষয়ও একটি সতর্ক সংকেত : ব্রাশের মাথা বা হাতলে ফাটল ধরেছে? অথবা ব্রিস্টলগুলো ছড়িয়ে গেছে চারদিকে? বুঝে নিন—এটা বদলানোর সময় এসেছে। এমন ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।
দন্ত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী—
- প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস পর টুথব্রাশ বদলানো উচিত
- ব্রিস্টল বাঁকা হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই বদলান
- অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও ব্রাশ বদলান
- ইলেকট্রিক টুথব্রাশ হলে শুধু হেডটা বদলালেই হয়
দাঁতের যত্ন মানেই শুধু দিনে দুবার ব্রাশ করা নয়—সেই ব্রাশটা ঠিকঠাক আছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। পুরোনো টুথব্রাশ আপনাকে মুখে জীবাণু, ইনফেকশন আর দাঁতের ক্ষতি এনে দিতে পারে অজান্তেই। তাই সময়মতো টুথব্রাশ বদলান, সুস্থ থাকুন, হাসুন নির্ভয়ে।
মন্তব্য করুন