

পেটব্যথা এমন একটি সমস্যা, যেটা প্রায় সবাই কখনো না কখনো অনুভব করেন। বেশিরভাগ সময় আমরা ভাবি—হয়তো বেশি খেয়ে ফেলেছি, ভুল খাবার খেয়েছি, বা হজমের গোলমাল হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, বারবার বা নিয়মিত পেটব্যথা অনেক সময় শরীরের ভিতরে থাকা গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে?
অনেকেই পেটব্যথাকে হালকা ভাবে নেন, কারণ ব্যথাটা মাঝে মাঝে হয় বা তেমন তীব্র নয়। কিন্তু গলস্টোন, আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস বা অ্যাপেন্ডিসাইটিস—এগুলো শুরুর লক্ষণও সাধারণ পেটব্যথার মতোই হতে পারে।
আরও পড়ুন : ৫ সহজ উপায়ে ইগো কমান
আরও পড়ুন : প্রতিদিন সকালে আমলকী খাওয়ার জাদুকরী গুণ জানলে অবাক হবেন
ব্যথার ধরন, কখন হয়, কোথায় হয়—এসব বুঝতে পারলে আপনি সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং জটিলতা এড়িয়ে যেতে পারবেন। নিচে জানুন কোন কোন রোগ আপনার ‘সাধারণ’ পেটব্যথার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে।
গলস্টোন (পিত্তথলিতে পাথর)
গলস্টোন হলো পিত্তথলিতে তৈরি হওয়া শক্ত পাথরের মতো দানা। এগুলো পিত্ত প্রবাহে বাধা তৈরি করে, বিশেষ করে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথা সাধারণত পেটের ডানদিকের ওপরের অংশে হয় এবং কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রাইটিস (পাকস্থলির আবরণে প্রদাহ)
পাকস্থলির দেয়ালে প্রদাহ হলে গ্যাস্ট্রাইটিস হয়। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক বা H. pylori ব্যাকটেরিয়ার কারণে এটি দেখা দিতে পারে। উপসর্গ হিসেবে বমিভাব, জ্বালাপোড়া ও পেটে ভারিভাব দেখা যায়। সাধারণত হালকা খাবার ও অ্যান্টাসিড এতে উপকার দেয়।
জিইআরডি (GERD - অ্যাসিড রিফ্লাক্স)
এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালির দিকে উঠে আসে। ফলে বুকজ্বালা, টক ঢেঁকুর ও উপরের পেটে অস্বস্তি হয়। যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্যনালির ক্ষতি হতে পারে। খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে না পড়া এবং হালকা খাবার খাওয়া উপকারী।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস (অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ)
এটি একটি জরুরি মেডিক্যাল অবস্থা। পেটের ডানদিকের নিচে তীব্র ব্যথা, জ্বর, বমি, এবং খাবার খেতে ইচ্ছা না হওয়া—এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
আইবিএস (IBS - হজমতন্ত্রের কার্যগত সমস্যা)
IBS কোনো সংক্রমণ নয়, বরং একটি দীর্ঘস্থায়ী হজমজনিত সমস্যা। স্ট্রেস, হরমোন পরিবর্তন বা কিছু নির্দিষ্ট খাবার এই অসুখ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পেটে ব্যথা, ফাঁপা ভাব, গ্যাস ও অস্বস্তি দেখা দেয়। যদিও এটি পুরোপুরি সারানো যায় না, তবে ডায়েট ও জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে সমস্যা কমানো যায়।
পেপটিক আলসার (পাকস্থলি বা অন্ত্রে ঘা)
এই রোগে পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের দেয়ালে ক্ষত বা ঘা তৈরি হয়। এর কারণ হতে পারে H. pylori ব্যাকটেরিয়া অথবা অতিরিক্ত ব্যথানাশক সেবন। উপসর্গ হিসেবে খালি পেটে জ্বালাপোড়া, টক ঢেঁকুর, হালকা বমিভাব ইত্যাদি দেখা দেয়। চিকিৎসা না করলে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন : খালি পেটে যে ৩ খাবার খেলে হতে পারে বিপদ!
আরও পড়ুন : শীতে সুস্থ থাকার সহজ ৭ উপায়
সব পেটব্যথাই গুরুতর নয়, কিন্তু ঘনঘন বা তীব্র ব্যথাকে কখনো অবহেলা করবেন না। শরীর অনেক সময় ছোট ছোট লক্ষণ দিয়ে বড় সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই নিয়মিত সুষম খাবার খান, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখুন, আর প্রয়োজন হলে অবশ্যই গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা
মন্তব্য করুন