

আপনি কি কখনো এমন কাউকে দেখেছেন যাকে সবাই খুব ভালো বলে? সে খুব হাসিমুখে কথা বলে, সবসময় সাহায্য করতে দৌড়ে যায়। কিন্তু আপনার ভেতরে কোথাও হালকা অস্বস্তি হয়! মনে হয় কিছু একটা ঠিক নেই। কারণ বলতে পারেন না, তাই হয়তো গুরুত্বও দেন না।
কয়েক মাস পর জানতে পারেন, সেই মানুষটাই নীরবে বন্ধুদের একে-অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছিল, গোপন কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিল আর সবসময় ভান করছিল যে সে সবার প্রতি খুবই যত্নশীল।
আরও পড়ুন : যে ১০ আচরণ ভালো ও সুন্দর সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়
আরও পড়ুন : নারীদের মধ্যে যে ৮ জিনিস খোঁজে পুরুষরা
আপনার সেই অস্বস্তিটা কোনো কল্পনা ছিল না। আপনার মস্তিষ্ক এমন অনেক ছোট ছোট সংকেত ধরেছিল যেগুলো আপনার চোখ বা মন খেয়ালই করেনি। মুখের ক্ষণিক বদল, কথার সুরের সূক্ষ্ম অমিল, আচরণের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন... আরও আনেক কিছুই। আপনার শরীর আগেই বুঝে গিয়েছিল কিছু ঝামেলা আছে, যদিও আপনি তখনও সেটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারেননি।
এটাই হলো অন্তর্দৃষ্টি বা সহজাত অনুভূতি, যা আসলেই সত্যি ও পরিমাপযোগ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ কখনো কখনো অচেতন অবস্থায়ও আশপাশের কিছু বিষয় বুঝে ফেলে এবং শরীর তার প্রতিক্রিয়া দেখায়।
আপনার ভেতরে যে সতর্ক সংকেত কাজ করে
আমাদের পেট ও অন্ত্রে প্রায় দশ কোটি স্নায়ুকোষ থাকে যা মেরুদণ্ডের স্নায়ুকোষের কাছাকাছি সংখ্যায়। এই বিপুল স্নায়ুতন্ত্র সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবিত থাকতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হতো, চিন্তা করার সময় ছিল না। তাই আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে যেখানে শরীর আগে সংকেত দেয়, পরে মন বাকিটা বুঝতে পারবে।
মস্তিষ্ক সবসময় আশপাশের মুখভঙ্গি, সুর, আচরণ—সবকিছু আগের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। কোথাও সামান্য বিপদের ইঙ্গিত পেলেই শরীর প্রতিক্রিয়া দেখায়—পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, কাঁধ টান টান হওয়া, শ্বাস দ্রুত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
তবে প্রতিটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া বিপদের ইঙ্গিত নয়। কখনো কখনো সেটা উদ্বেগের প্রভাবও হতে পারে। চলুন জেনে নিই যে ১০টি সহজাত অনুভূতি আপনাকে জানান দেয় - এই মানুষটি আপনার জন্য ভালো নয়।
তাদের সঙ্গে দেখা হলে আপনি পরে খুব ক্লান্ত লাগে
যদি কারও সঙ্গে সময় কাটানোর পর মনে হয় আপনার শক্তি (energy) যেন শেষ হয়ে গেছে, তাহলে বোঝা যায় আপনার শরীর ওই মানুষের আচরণকে সন্দেহের চোখে দেখছিল। আপনি বুঝতে না পারলেও শরীর সবসময় সতর্ক ছিল দেখেই আপনার শক্তি শেষ হয়ে যায়। ভালো সম্পর্ক কখনো মনে বা শরীরে এমন ক্লান্তি তৈরি করে না।
ওই মানুষের সঙ্গে থাকলে আপনি নিজেকে বারবার সন্দেহ করেন
যদি কেউ আপনাকে বারবার বলে, ‘তুমি ভুল মনে করছো’ অথবা ‘তোমার বিচার ঠিক নয়’, তাহলে ধীরে ধীরে আপনি নিজের ওপরই সন্দেহ করতে শুরু করেন। এই হঠাৎ আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়াটাও সতর্ক সংকেত।
তাদের আশপাশে থাকলে আপনার শরীর সতর্ক থাকে
কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া, পেটে অস্থিরতা, বুক ভারী লাগা—এসব তখনই হয় যখন শরীর মনে করে কিছু একটা অনুভূতি ঠিক নেই। মুখ, চোখ, গলার স্বর—এগুলোর খুব ক্ষুদ্র পরিবর্তন, তবে আপনার শরীর ও মন আগেই ধরে ফেলে।
তারা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে আনন্দ পায়
মজা করার নামে তারা এমন কথা বলে যা আপনাকে খোঁচা দেওয়ার জন্য হয়ে থাকে। আপনি অস্বস্তি দেখালেও তারা থামে না। যে সত্যি আপনার বিষয়ে সচেতন, সে আপনাকে অস্বস্তি দেয়, এমন কিছু করবেনা।
তাদের সঙ্গে থাকলে আপনি নিজেকে ছোট মনে করেন
তারা আপনার কথাকে মূল্য দেয় না, মতামতের গুরুত্ব দেয় না, হাসির ছলে আপনাকে অবমূল্যায়ন করে। ধীরে ধীরে আপনি নিজের ভাবনা চেপে রেখে শান্ত থাকাকে নিরাপদ মনে করেন। মনে রাখবেন, এটা স্বাভাবিক নয়- এটা নিজের প্রতি অসম্মানের পরিচয়।
তাদের কথা ও কাজ মেলে না
কথায় যত্ন দেখালেও কাজে তা দেখা যায় না। আর কথা ও কাজ না মিললে শরীরের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি হয়। কারণ আপনার মন বুঝে যায়—কোন ঝামেলা আছে।
নিজের সীমা বা সীমানা টানতে গেলে আপনি অপরাধবোধে ভোগেন
আপনি যখনই নিজের সীমা নির্ধারিত করতে বা সীমানা টানতে চান তারা সরাসরি কিছু না বললেও মুখ ভার করে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বা চুপ করে থাকে যাতে আপনি নিজেকে দোষী মনে করেন। এটা নিয়ন্ত্রণ করার একটি ধরনের।
নিজের ছোট ছোট সিদ্ধান্তেও আপনাকে বারবার ব্যাখ্যা দিতে হয়
সুস্থ সম্পর্ক কখনো অতিরিক্ত ব্যাখ্যার দাবি করে না। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছা করে আপনার কথা ভুলভাবে ধরতে থাকে, তাহলে আপনাকে সবসময় নিজেদের ব্যাখ্যা দিতে হয়।
তারা সহমর্মিতার ভান করে, কিন্তু তা আসল নয়
তারা মুখে ঠিক কথা বললেও অনুভূতিটা ফাঁপা লাগে। তখন শরীর বুঝে যায়—এটা মন থেকে আসছে না, শুধু নকল করা সহানুভূতি।
আপনি নিজেকে নজরদারির মধ্যে অনুভব করেন
তারা আপনার প্রতিটি ভুল খুঁটিয়ে দেখে, অতিরিক্ত প্রশ্ন করে, অথবা এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করে যেন তারা আপনাকে বিচার করছে। এতে ধীরে ধীরে আপনি নিজের আচরণ বদলে ফেলেন, যদিও ঠিক বুঝতে পারেন না কেন।
যখন সহজাত অনুভূতি বিভ্রান্ততে পরিণত হয়
অতীতের বাজে অনুভূতি বা মানসিক আঘাত থাকলে শরীরের সহজাত অনুভূতি ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে বড় হলে মানুষ ভুলকেও স্বাভাবিকভাবে নেয়। তখন বিপদ ও নিরাপত্তা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজও বিশেষ করে মেয়েদের ছোট থেকেই শেখায়—সবসময় ভদ্র হও, অশান্তি তৈরি করো না, সবার মন রাখতে হবে। ফলে নিজের মনের কথা সন্দেহ করতে শিখে যায় তারা।
আরও পড়ুন : ভালোবাসার সম্পর্কে যে ১০ জিনিস নারীর প্রাপ্য
আরও পড়ুন : যেসব লক্ষণ বলে দেয় আপনার সঙ্গী আপনার জন্য সঠিক নয়
তবু অন্তরের অস্পষ্ট সংকেতও মূল্যবান। এ বিষয়ে লাগলে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিয়ে ভাবুন। সময়, চর্চা ও সহায়তার মাধ্যমে এই অনুভূতি আবার পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
সূত্র : Secret life of Mom
মন্তব্য করুন