কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খন্দকায় ক্লান্ত যাত্রা

বান্দরবানের পাহাড়ি পথ। ছবি : টি এইচ মাহির
বান্দরবানের পাহাড়ি পথ। ছবি : টি এইচ মাহির

এক দিন আগে আবার দাদুবাড়ি বান্দরবান এসেছি। বান্দরবানের ফাইতংয়ে। আজ সকাল সকাল ঠিক করলাম কোথাও হাঁটতে বের হব। যাই হোক, ফুফাতো ভাইয়ের সাথে আলোচনা করলাম। আমার ফুফাতো ভাই বলল মুরংপাড়ায় যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সাথে যাবে আমার আরও দুই ভাই। মোট চারজন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ গ্রাম থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। পথে দু’তিনটে ইটভাটা পড়ল। গ্রাম ছেড়ে আমরা যত‌ই হাঁটছি তত জনশূন্য হয়ে পড়ছে আমাদের দুপাশে। বালুময় রাস্তা আর দুপাশে পাহাড়। যত‌ই এগুচ্ছি মনে হচ্ছে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছি। কখনো পাহাড়ি ছড়া (ঝরনা থেকে আসা পানি) আবার কখনো পাথর, বালুমাখা রাস্তা।

অনেকক্ষণ হাঁটার পর একটা বাড়ির দেখা পেলাম। চাকমা বাড়ি। কিন্তু মনে হলো জনমানব শূন্য। বাড়ির উঠোনে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা আছে ঈগলের ডানা। যাই হোক আমরা কিছুক্ষণ থেমে আবার চলতে শুরু করলাম । এবার পথে পথে পাথর স্তূপ করে রাখা। এসব পাথর বিক্রি করার জন্য রেখেছে। গাড়ি এসে নিয়ে যাবে, ফুফাতো ভাই জানাল। পথে কয়েকটা পাহাড়ের মাটি দেখলাম পাথরে ঠাঁসা।

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। বারবার ফুফাতো ভাইকে জিজ্ঞেস করছি আর কতক্ষণ আছে মুরংপাড়ায় পৌঁছানোর। এদিকে আবার আমরা পানিও সঙ্গে করে নিয়ে আসিনি।

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আধ ঘণ্টা পর আমরা মুরংপাড়ার মসজিদ দেখতে পেলাম। সাধারণত মুরংরা অন্য ধর্মের হলেও এই পাড়ায় যারা থাকে তারা মুসলিম। মুরংপাড়ায় পৌঁছে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। মসজিদটা দেখতে গেলাম। ভেতরে দরজা খুলে দেখি পোকামাকড়ের আবাস। যাই হোক, পানি খেয়ে আবার র‌ওনা দিলাম। হাতে ঘড়ি না থাকায় কয়টা বাজল তাও বলতে পারি না। তাই দ্রুত র‌ওনা দিলাম। ফুফাতো ভাই বলল, এবার শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যা‌ওয়া যাক। আমিও সায় দিলাম।

কিছুদূর যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমার এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কেননা আমরা বাড়ি ফিরতে যে পথ দিয়ে যাচ্ছি তা সম্পূর্ণ পাহাড়ের ওপর দিয়ে। কখনো উঁচু আবার কখনো নিচু। দুপাশে ঢালু। পাহাড়ের ওপর থেকে গ্রামগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুরংপাড়ায় তেমন একটা ঘরবাড়ি নেই বললেই চলে। বিদ্যুৎও এখানে পৌঁছায়নি। পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ছি তেমনি বুকের হৃৎপিণ্ডের কম্পন বেড়েই চলছে। বারবার ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছি। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। গাছে গাছে ফলমূলের সন্ধান করতে লাগলাম। দুএকটা বর‌ই মুখে পুরে হাঁটতে শুরু করলাম। পাহাড়ের এই উঁচু-নিচু খেলা একসময় শেষ হলো। এবার হাঁটতে হাঁটতে পেলাম ছড়া। ছড়া পার হয়ে আমরা একটা চাকমাপাড়ায় এলাম। ক্লান্ত আমি কখন বাড়িতে পৌঁছাব সেই প্রতীক্ষাই করছিলাম। চাকমাপাড়া পার হয়ে যখন ইটভাটায় প্রবেশ করলাম তখন যেন ধড়ে পানি আসল। যাই হোক, আমাদের গ্রামে এসে একটা ঠান্ডা ক্লোল্ড ড্রিংক্স দিয়ে গলা ভেজালাম। তারপর মসজিদের ওজুখানায় হাত-মুখ ধুয়ে বাড়িতে র‌ওনা দিলাম।

যারা এ রকম পাহাড়ে ভ্রমণ করবেন সবসময় পানি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। কারণ পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায় ক্লান্তির রূপ ভয়ঙ্কর।

লেখক : টি এইচ মাহির।

শিক্ষার্থী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অলিম্পিকে পদকের লড়াই হবে যে ইভেন্টগুলোতে (২৭ জুলাই)

দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে নতুন ছক সৌদির

রাশিয়ার সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার

ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

মানামার বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, ঢাকার পরিস্থিতি কী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল যে দেশগুলো

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

উদ্বোধনীতে অ্যাথলেটদের চেয়ে বেশি উৎফুল্ল বাংলাদেশের কর্তারা

১০

কুষ্টিয়ায় নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার

১১

৬ দিন পর বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

১২

ভেজানো ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

১৩

হামলা মামলা ও লাঞ্ছনার শিকার লালমনিরহাটের ৬ সাংবাদিক

১৪

কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র, লজ্জায় আত্মহত্যা

১৫

প্যারিসের আলোয় উদ্ভাসিত অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

১৬

ট্রলার উদ্ধারে গিয়ে ডুবল স্পিডবোট, সৈকতে ভেসে এল ২ মরদেহ

১৭

সিলেটে ‘অবৈধ’ নিয়োগে প্রভাষক জালিয়াতিতে অধ্যক্ষ!

১৮

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী শনিবার

১৯

ইতিহাসে এই দিনে কী ঘটেছিল?

২০
X