বাসস
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অকেজো হওয়ার পথে শিক্ষার্থী তামিমের হাত

তামিম হোসাইন ও তার মা। ছবি : সংগৃহীত
তামিম হোসাইন ও তার মা। ছবি : সংগৃহীত

কলেজ শিক্ষার্থী তামিম হোসাইন। তিনি একসময়ে ব্যাট-বল হাতে গ্রামের মাঠে ছুটে বেড়াতেন। এখন বিছানা আর বাড়ির আঙ্গিনায় ছটফট করে দিন কাটাচ্ছেন। একসময়ে তার দু’চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। এখন সে দু’চোখে শুধুই অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা।

তামিমের বয়স ২৩ বছর। এ বয়সে জীবনের ক্যানভাস থাকার কথা ছিল বর্ণিল। কিন্তু আজ সেটা ফ্যাকাসে, বিবর্ণ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তামিম। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে তার বাঁ হাত এখন সারা জীবনের জন্যে অকেজো হওয়ার পথে। ফলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। তামিমের বাঁ হাতের রগ আর হাড়ের ভেতর এখনো গুলি রয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসা না পেলে চিরদিনের জন্যে বাঁ হাতটি অকেজো হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা ডাক্তারদের।

জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিল মাদারীপুর পৌর শহরের লেকপাড়।

একদিকে শিক্ষার্থী, অন্যদিকে তৎকালীন সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী। তিন ঘন্টাব্যাপী চলে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়লে ব্যাপকভাবে গুলি ছুঁড়তে থাকে পুলিশ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের মধ্যে মাদারীপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ডিগ্রী শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসাইনের শরীরের একাধিক জায়গায় গুলি লাগে। আহত তামিমকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরের দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার তিন দিন পরে ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হয়।

সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে তামিম। তবে তার বাঁ হাতের তালুর রগ আর একটি আঙ্গুলের গুলি বের করা যায়নি। তার বাঁ হাতটি বলতে গেলে অকেজো হওয়ার পথে। আর্থিক সমস্যার কারণে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছে না তামিমের পরিবার।

আহত তামিমের মা মোসাম্মৎ নাজমা বেগম বলেন, ‘সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা চলে তামিমের। কিন্তু বাঁ হাতের রগে গুলি থাকায় হাতটি অকেজো হওয়ার পথে। এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠন থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। শুনেছি, সরকারিভাবে চিকিৎসা করবে। কিন্তু সেটার কোন প্রতিফলন দেখছি না। আমাদের তেমন আর্থিক সচ্ছলতা নেই। সরকারি সাহায্য খুব দরকার।’

তামিমের স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধ সেজেছে বাঁ হাতের অক্ষমতা। তামিমের বাবা মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্দী গ্রামের মো. আনোয়ার মাতুব্বর। তিনি ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আনোয়ার মাতুব্বরের দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলে তামিম।

সামান্য আয়ে চলছিল তাদের সংসার। আনোয়ার মাতুব্বরের পক্ষে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না। বর্তমানে তামিমের চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন ১০ লাখের বেশি টাকা। তাই এ স্বপ্নবাজ তরুণের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি আহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর।

আর উদীয়মান তরুণ তামিমের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা গুলির সামনে নিজেদের বুঁক উচিয়ে কেউ শহীদ আবার কেউবা আহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার জন্যে সরকারের এগিয়ে আসা। ‘না হলে অধরাই থেকে যাবে আমাদের স্বপ্ন’ উল্লেখ করেন তামিম।

এদিকে জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, যারা সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সহযোগিতা করা হবে। যদি কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায়, সেক্ষেত্রেও পুলিশ প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর কোন পুলিশ সরাসরি দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় হামাসের বন্দুকধারীদের টহল

আগামীর রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্ণ রূপরেখা ৩১ দফাতেই রয়েছে : কফিল উদ্দিন 

পরিবেশ রক্ষায় ৮০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে : টুকু 

ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান গড়বে বিএনপি : আমিনুল হক

মিসরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেন ট্রাম্প

নেইমারের জন্য এখনও দরজা খোলা রেখেছেন আনচেলত্তি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ও প্রফেশনাল কোর্সের সব পরীক্ষা স্থগিত

ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে

পলিথিনে মোড়ানো শপিং ব্যাগে মিলল নবজাতকের মরদেহ

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

১০

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

১১

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

১২

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

১৩

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

১৪

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

১৫

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

১৬

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

১৭

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

১৮

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১৯

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

২০
X