একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা যা সম্ভব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সবই করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. মোস্তফা জামান। একই সাথে বিএসএমএমইউয়ে সাঈদীকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তাতে তার পরিবার সন্তুষ্ট বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আজ সারাদিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ডা. মোস্তফা জামান বলেন, বারবার তাকে আমরা দেখেছি এবং কথা বলেছি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আজকে (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি আবারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। আপনারা জানেন ইতঃপূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে তার পাঁচটি স্টেন্টিং করা ছিল। এরপর আজ ৭টা ১০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধপত্র, কার্ডিয়াক মেসেজ, অর্থাৎ লাইভ সাপোর্টের সঙ্গে যা যা করণীয় করেছি।
তিনি বলেন, একজন কার্ডিয়াক রোগীকে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী যেসব চিকিৎসা দেওয়া হয়, আমরা সাঈদী সাহেবকে সে ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার সন্তানদের অনুমতি নিয়ে তার হার্টের টিউবগুলো রিমুভ করা হয়। এসময় আমরা তার দুই সন্তানকে সব ধরনের প্রসিডিউর ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের করণীয় কী, তাদের করণীয় কী সবকিছুই বুঝিয়ে বলেছি।
সাঈদী সাহেবের সন্তানরা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসায় তারা সন্তুষ্ট। সাঈদী সাহেব গতকাল (রোববার) হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান আমাকে রিং পরানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন। কিন্তু আমরা যখন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করি, তখন দেখি যে তার হার্টে সেই মুহূর্তে রিং পরানো সম্ভব নয়। যে কারণে তাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় এবং ওষুধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আমরা করোনারি কেয়ার ইউনিটে তাকে ভর্তি রাখা হয় বরে জানিয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের এই অধ্যাপক।
ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি। আমাদের এখানে সাঈদী এসেছিলেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, আমরা তাদের কাছেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি।
এর আগে আজে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রোববার (১৩ আগস্ট) বিকালে তিনি কারাগারের ভেতরে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে রাতেই তাকে জরুরি অবস্থায় ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়।
কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকাল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন সাঈদী।
পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মন্তব্য করুন