গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর দেশ ছেড়েছেন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন বলে পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার (৯ মে) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভ বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন, তা নিয়ে তোলপাড় চলছে। তার দেশত্যাগের খবরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। পতিত সরকারের বড় সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে ‘বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার’ সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিচারেরও দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তার দেশত্যাগে যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার (০৮ মে) দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এই কথা বলেন। তিনি যখন সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, ‘দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে কী করবেন?’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দেন, ‘তা না হলে আমিই চলে যাব।’
বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পর সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন)-কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার, হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আখতারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগ অবগত নয়। কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। তার বিদেশযাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা বা গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও আমাদের কাছে ছিল না। তিনি বলেন, সাবেক ওই রাষ্ট্রপতি কোন দেশে গেছেন, কেন গেছেন—তাও বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা ইমিগ্রেশন পুলিশ অবগত নয়। কারণ ইমিগ্রেশন পুলিশ শুধু বোর্ডিং পাস ও পাসপোর্ট যাচাই করে থাকে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগের অন্য এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, কারও বিদেশযাত্রা ঠেকাতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দরকার বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকতে হয়। এর কিছুই ইমিগ্রেশনে ছিল না। তা ছাড়া সংবিধানের ৩৪ ও ১০২ ধারা অনুযায়ী, আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ ছাড়া কাউকে দেশত্যাগে বাধা দেওয়া যায় না।
এদিকে আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্র দাবি করছে, মূলত চিকিৎসার জন্যই চিকিৎসকের পরামর্শে সাবেক রাষ্ট্রপতি থাইল্যান্ড গেছেন। তিনি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। শুক্রবার (০৯ মে) সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার করানোর কথা রয়েছে। চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরবেন বলে স্বজনরা জানেন।
মন্তব্য করুন