মাথার ওপর থেকে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। তবে প্রচণ্ড আঁচে গা পুড়ে যায় যায় অবস্থা। মায়ের সঙ্গে রিকশায় বসা এক তৃষ্ণার্ত শিশু কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল পথে পানি বিক্রেতার দিকে। সন্তানের পিপাসা বুঝতে পেরে মা একটি পানির বোতল কিনে দেন।
শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় এ দৃশ্য দেখা যায়।
দুই দিন আগে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ শুক্রবার তীব্র রূপ ধারণ করেছে। তাপপ্রবাহের বিস্তার ছড়িয়েছে ৫৬ জেলায়। এদিন চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। রাজধানীতেও চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। তীব্র গরমে ছোট-বড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। বেলা গড়ানোর পর থেকেই রোদের প্রচণ্ড তাপে বাড়ছে গরমের অনুভূতি। বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোদের খরতাপে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছেন তারা। ছুটির দিনে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি অনেকে। তারপরও যারা কাজের সূত্রে বাইরে বের হয়েছেন তাদের জীবন যায় যায় অবস্থা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার তাপপ্রবাহ দেশের আরও বেশি এলাকায় ছড়িয়েছে। আর এ অবস্থা আরও অন্তত দুই দিন থাকতে পারে। আসলে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহ কমার তেমন লক্ষণ নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, তাপপ্রবাহের পরিধি অনেকটাই বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানীতেও তাপপ্রবাহ চলতি বছরের সর্বোচ্চ। এ অবস্থা অন্তত দুই দিন আরও চলতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি এ মাসের জন্য খুব অস্বাভাবিক নয়। আগামী সোমবার থেকে তাপপ্রবাহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রশমিত হতে পারে।
শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি বছরে দুই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৩ এপ্রিল যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাও এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২৮ মার্চ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
রোববার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সোম ও মঙ্গলবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সোমবার সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে। মঙ্গলবার সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বর্ণিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর সড়কে মানুষজনের চলাফেরা কম, যানবাহনও কম। পল্টন মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক সোহাগ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ ভোর বেলায় কিছু ভাড়া টানছি। এরপর সূর্যের তাপে আর পারিনি। শরীর দিয়ে শুধু ঘাম যাচ্ছে। প্যাডেল ঘোরাতে কষ্ট। রাতে যদি একটু গরম কমে তখন আবার রিকশা চালাব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ বলেন, ‘একে প্রচণ্ড গরম, তার ওপর যানজট। বাসও যাত্রীতে ঠাসা। একসময় মনে হয়েছে অজ্ঞান হয়ে যাব। পরে বাস থেকে নেমে পানি কিনে হাতমুখে ঝাপটা দিই। তাতে কিছুটা রক্ষা।’
বৈশাখের দাবদাহে রাজধানীবাসী দিনভর একদণ্ড শান্তি খুঁজেছেন শরবতের গ্লাসে, পানির বোতলে কিংবা শসার টুকরোতে। আবার টংঘরে চা খেতে এসেও অনেকে খুঁজেছেন খাবার স্যালাইন। আজিমপুর এলাকার দোকানদার হাসানুর রহমান বলেন, ‘গরম বাড়ার পর থেকে কাস্টমার স্যালাইন খোঁজে। তাই রাখছি। ভালো চলে।’ আবার নীলক্ষেত মোড়ে এক রিকশাচালককে ২০ টাকা দিয়ে পানি কিনে মাথায় ঢালতে দেখা যায়।
মন্তব্য করুন