কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১১:২২ এএম
আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সার্বিক ভূমি ও কৃষি সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাব

সার্বিক ভূমি ও কৃষি সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাব

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, সালাম ও শুভেচ্ছা।

আপনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করার জন্য এরই মধ্যে ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু কৃষক সমাজসহ দেশের ৮০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত আমাদের বিপুল সম্ভাবনাময় ভূমি ও কৃষি সংস্কার এবং পরিবেশ সুরক্ষায় প্রস্তাব দেওয়ার জন্য কোনো সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি।

সে কারণে আমরা দেশের জাতীয় পর্যায়ের নিম্নোক্ত ১৩টি নাগরিক অধিকারভিত্তিক সংস্থার পক্ষে সার্বিক ভূমি ও কৃষি সংস্কারের লক্ষ্যে ৩৬টি মূল বিষয়ভিত্তিক একটি প্রস্তাব আপনার সরকারের সুবিবেচনা, সব দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বৃহত্তর জনগণের অবগতির জন্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করছি।

বিনীত

সংস্থাসমূহের পক্ষে

শামসুল হুদা

সংস্থাসমূহ: এএলআরডি, নিজেরা করি, টিআইবি, বেলা, ব্লাস্ট, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, এইচডিআরসি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বারসিক, নাগরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন।

ক্র নং বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়

মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয়

১. স্থায়ী জাতীয় ভূমি-কৃষি সংস্কার ও পরিবেশ সুরক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠা
  • অবিলম্বে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী জাতীয় ভূমি ও কৃষি সংস্কার এবং পরিবেশ সুরক্ষা কমিশন গঠন করা;
  • এই কমিশনের নিজস্ব কার্যপরিধি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান;
  • এই কমিশনের সূচনা পর্বের কাজের জন্য লোকবল নিয়োগ করা এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা।
  • বিভিন্ন অংশী জনগোষ্ঠী বিশেষত নারী, আদিবাসী, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন, বর্গাচাষি, জেলে প্রভৃতিসহ সবার মতামত চাহিদাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা;
  • জাতীয় ভূমি ও কৃষি সংস্কার এবং পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ ও জাতীয় সংসদে যথাযথভাবে অনুমোদন এবং তার জন্য দীর্ঘমেয়াদে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন;
  • এ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্থানীয় সরকার, কৃষক ও ভূমিহীন সংগঠন, গ্রামীণ নারীদের সংগঠন, আদিবাসী সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা এবং বাস্তবায়নের কাজ মনিটরিংয়ের জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক মনিটরিং কাঠামো প্রবর্তন করা।
২. খাস কৃষিজমি
  • খাসজমির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করা;
  • খাসজমি বিতরণের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি;
  • ভূমিহীনদের নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া চালু করা;
  • খাসজমি বন্দোবস্তের অগ্রাধিকার তালিকায় বিধবা নারী এবং একক নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে সক্ষম পুত্র থাকার শর্তটি বাতিল করা এবং সেইসঙ্গে তালিকায় ভূমিহীন সমতলের আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা;
  • ভূমিহীন নারী-পুরুষ নেত্রী-নেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা।
  • বেদখল হওয়া খাসজমি পুনরুদ্ধার করা এবং এজন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করা;
  • বন্দোবস্তকৃত খাসজমির উৎপাদনশীল ব্যবহারের জন্য কৃষি উপকরণ ও কৃষিঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা। দেশীয় উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহারে উৎসাহিত করা;
  • যৌথ চাষাবাদ/সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদকে প্রশিক্ষণ এবং সমবায়বান্ধব বিভিন্ন পর্যায়ের প্রণোদনা প্রদান করা;
  • কৃষিবাজারে ভূমিহীন, সমবায়ী ও নারী কৃষকদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা ও সক্ষমতা সম্প্রসারিত করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও উদ্যোগ নেওয়া।
৩. কৃষিজমির সুরক্ষা ও কৃষিজমি অধিগ্রহণ
  • কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের খসড়াটি ভূমি-কৃষি বিশেষজ্ঞসহ নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করা;
  • ভূমি জোনিং ব্যবস্থা চালু করতে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করতে হবে;
  • কৃষিজমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন করে ৩ বা ২ ফসলি কৃষিজমি অধিগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে;
  • ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিজমিতে ইটভাটা নিষিদ্ধ করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
  • কৃষিজমির টেকসই ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা;
  • ২ বা ৩ ফসলি জমি কৃষি আবাদ ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা;
  • কোনো অজুহাতে আগে ৩ ফসলি কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়ে থাকলে তা ডি-অ্যাকুইজেশন করার বিধান কার্যকর করতে হবে;
  • সব সরকারি স্থাপনা তৈরিতে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় সীমা দিয়ে ইটের ব্যবহার ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করা আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে।
৪. ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ে ভূমি ব্যাংক ব্যবহার প্রচলন করা;
  • দুর্নীতিবাজ কর্মচারী, ভূমিদস্যু ও ক্ষমতাবানদের দৌরাত্ম্য এবং ভূমির অপব্যবহার ও ভূমি দুর্নীতি রোধে ভূমি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বা প্রক্রিয়া চালু করতে হবে;
  • ভূমি কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল দলিল ইত্যদির মাধ্যমে ভূমি ক্রয়-বিক্রয় আইনত কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করতে হবে;
  • আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া।
  • ভূমি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা;
  • ভূমি ব্যাংকের কাছে ভূমি মালিকানাসহ সব তথ্যভান্ডার থাকতে হবে; তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা তাদের গড়ে তুলতে হবে;
  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক ভূমি ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি হস্তান্তর করতে সর্বস্তরের মানুষ যেন সুবিধা পায় তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
৫. নগর দরিদ্রদের খাসজমিসহ অন্যান্য নাগরিক সেবায় অধিকার প্রতিষ্ঠা
  • নগর দরিদ্র বিশেষত বস্তিবাসী দরিদ্রদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া অতিশিগগির শুরু ও একটি অনলাইন ডাটাবেজ, (নারী, পথশিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণসহ) প্রণয়নের নির্দেশনা জারি করা;
  • অকৃষি খাসজমি চিহ্নিত করে তাদের জন্য স্থায়ী আবাসন সুবিধার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
  • সমন্বিত আবাসন ও পুনর্বাসন (শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ) কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার অন্যান্য দেশের নগর দরিদ্রদের পুনর্বাসনের অভিজ্ঞতাগুলো পর্যালোচনা করা;
  • নগর দরিদ্রদের অধিকার সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন;
  • নগর দরিদ্রদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া ও তা কার্যকর করা।
৬. কৃষিজমির সিলিং হ্রাসকরণ এবং অকৃষিজমি এবং নগর আবাসনে ব্যবহৃত জমির সিলিং নির্ধারণ
  • কৃষিজমির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সিলিং-সংক্রান্ত আইনের বিধানের সংশোধন ও তা পরিবারপ্রতি ২৫-৩০ বিঘায় নামিয়ে আনা;
  • নগরের জন্য সিলিং আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন;
  • সিলিং বিবেচনায় নিয়ে গ্রাম ও নগরের ভূমি করের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা।
  • এলাকাভেদে কৃষিজমির সিলিং কমিয়ে তা ২৫ থেকে ৩০ বিঘা নির্ধারণ;
  • কৃষিজমির ক্ষেত্রে সিলিং উদ্বৃত্ত জমি কৃষিনির্ভর প্রান্তিক মানুষের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা;
  • নগরের সিলিংবহির্ভূত জমি নগরের জনপরিষেবার জন্য যেমন-পরিবেশ উন্নয়ন (উন্মুক্ত স্থান-খেলার মাঠ, পার্ক, লেক, উদ্যান, নগর দরিদ্রদের পুনর্বাসন ইত্যাদির জন্য) ব্যবহার করা;
  • ভূমির সুষম বণ্টন নিশ্চিতে সারা দেশের জন্য একটি টেকসই ভূমি ব্যবহার (সাসটেইনেবল) পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
৭. অনুপস্থিত ভূমি মালিকদের কৃষিজমি ব্যবহারের নীতিমালা
  • অনুপস্থিত ভূমিমালিকদের কৃষিজমি ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা;
  • সিলিংসীমার বাইরে জমির মালিকানা নিষিদ্ধ করা, সিলিং উদ্ধৃত জমি উদ্ধার এবং ভূমিহীন ও প্রান্তিকজনের মধ্যে বণ্টন করা;
  • বর্গাচুক্তি মান্য করে অনুপস্থিত মালিকরা জমি বর্গায় চাষাবাদের সুযোগ পাবেন।
  • বর্গাচুক্তি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং তা বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের আইনি কাঠামো প্রবর্তন করা;
  • বর্গাচাষের বিকল্প টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীল পন্থা অনুসরণের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৮. বর্গাচাষির অধিকার সুরক্ষা
  • বর্গা আইনের সংস্কার করে তাদের অধিকার রক্ষা;
  • আইন অনুযায়ী বর্গাসংক্রান্ত বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশনা জারি করা;
  • বর্গাচাষি ও বর্গা কৃষক অধিকার রক্ষায় আলাদা কর্তৃপক্ষ স্থপন করা।
  • বর্গাচাষের অধীন কৃষিজমির টেকসই ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন;
  • কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণসহ টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করা;
  • বর্গাচাষিদের আলাদা কার্ড প্রদান এবং ওই কার্ডের বিপরীতে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৯. দলিত, হরিজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ভূমি ও আবাসন অধিকার
  • দলিত, হরিজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সবার ডাটাবেজ তৈরি;
  • মানবিক আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া;
  • তাদের মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা ঘোষণা করতে হবে।
  • ডাটাবেজের ভিত্তিতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ, বাজেট বরাদ্দ করা এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা;
  • কৃষিজীবী দলিত ভূমিহীনদের মধ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে খাসজমি বণ্টনের নির্দেশনা জারি করা;এই জনগোষ্ঠীর নারী এবং শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ ও বিশেষ কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
১০. উর্দুভাষী সংখ্যালঘু নাগরিকদের ভূমি, আবাসন ও শিক্ষার অধিকার
  • ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, সৈয়দপুরসহ বাংলাদেশের নাগরিক প্রান্তিক উর্দুভাষী সংখ্যালঘুদের তাদের পূর্বপ্রজন্মের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেওয়া।
  • স্থায়ী আবাসন নিশ্চিতকরণ; শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ তৈরি;
  • নারীদের স্বাস্থ্যসেবার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • সমাজে মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, বিদ্বেষ ও বৈষম্য রোধে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা;
  • তাদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে বিশেষ ঋণ কর্মসূচি এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন।
১১. নারীর ভূমি ও কৃষি অধিকার
  • খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালায় উল্লিখিত বিধবা নারীদের ক্ষেত্রে সক্ষমপুত্র সন্তান থাকার অবৈধ, বৈষম্যমূলক বিধানটি অবিলম্বে বাতিল করা;
  • আদিবাসী নারীসহ সব নারী কৃষকের এলাকাওয়ারি নিবন্ধন, তাদের কৃষক হিসেবে কার্যকর স্বীকৃতি, কৃষি কার্ড বিতরণ, সহজ শর্তে সরকারি কৃষিসেবা, ভর্তুকি ও প্রশিক্ষণের নিশ্চয়তা এবং তা বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
  • ভূমি ও সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংস্কার করতে হবে;
  • আদিবাসী নারীসহ সব নারী কৃষকের জন্য কৃষিঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা;
  • কৃষি ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে নারী কৃষকদের জন্য কৃষিঋণ নির্দিষ্ট করা এবং তা বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা;
  • সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর নারীর ভূমিতে অভিগম্যতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে প্রচলিত উত্তরাধিকার আইনের যুগোপযোগী সংস্কার;
  • নারী কৃষকদের কৃষিবাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নারীদের জন্য পৃথক বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে;
১২. কৃষি মজুরদের স্বীকৃতি
  • কৃষি মজুরদের স্বীকৃতি দিয়ে ডাটাবেজ তৈরি, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি;
  • নারী-পুরুষ মজুরি বৈষম্য দূরীকরণে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশে ১৯৮৪-এর কৃষিসংক্রান্ত মজুরির ধারায় সংশোধনী এনে তা কার্যকর করা ও মাঠপর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা;
  • আইএলও কনভেনশন ১৪১ অনুস্বাক্ষর করে গ্রামীণ শ্রমজীবী কৃষকদের সংগঠন করার অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান ও সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • কৃষি মজুরদের অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতে প্রতিকার চাইবার বিধান শ্রম আইনে সন্নিবেশিত করা;
  • কৃষি মজুর/শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় আনতে হবে। কৃষি মজুর/শ্রমিকদের সমবায় বা যৌথ চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন;
  • সংগঠিত ও নিবন্ধিত কৃষি মজুর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাতে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ নিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
১৩. সমতলের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার
  • সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সুরক্ষায় বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর ৯৭ ধারা যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা;
  • সমতলের আদি জাতিগোষ্ঠীর ভূমি ও অন্যান্য অধিকার সুরক্ষায় পৃথক একটি ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া;
  • আইএলও কনভেনশন ১০৭ পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ১৬৯ অনুস্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বসবাসরত আদি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পথ সুগম করা।
  • আদিবাসীদের সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য আলাদা জনশুমারির ব্যবস্থা করা;
  • যারা প্রতারণার মাধ্যমে সমতলের আদি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জমি বেদখল করেছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের জমি পুনরুদ্ধারে আইনি বিধান জারি করা;
  • ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা আদিবাসীদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • আদি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার সুরক্ষা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।
১৪. পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের সুরক্ষা
  • পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের শূন্যপদ অবিলম্বে পূরণ করা এবং এই কমিশনকে যথাযথভাবে কার্যকর করা;
  • বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ি আদিবাসী উদ্বাস্তু/ বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে অবিলম্বে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং তালিকা অনুযায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে; এর জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।
  • পার্বত্য চুক্তির ভূমি ও পরিবেশবিষয়ক ধারাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা;
  • পার্বত্য অঞ্চলে যেসব অ-পাহাড়ি সেটলারকে আশির দশক থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এনে পাহাড়িদের প্রথাগত কৃষিজমি, বাড়ি এমনকি পরিবেশ বিপন্ন করে পাহাড়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে অকার্যকর ঘোষণা করা;
  • অ-পাহাড়িদের নিরাপদে সসম্মানে নিজ নিজ জেলায় অথবা কাছাকাছি এলাকায় পুনর্বাসন করার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা; এজন্য পাহাড়ি অ-পাহাড়ি উভয় জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা অবিলম্বে শুরু করা; এর জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে;
  • পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় বাজেট ও লোকবল নিয়োগ দিতে হবে;
  • পার্বত্য চু্ক্তির (১৯৯৭) ভূমি ও পরিবেশবিষয়ক ধারাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
  • ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কাছে এ পর্যন্ত যেসব আবেদন জমা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কমিশনের দক্ষ লোকবল, জেলাভিত্তিক দপ্তর এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
১৫. নদীভাঙা পরিবারের পুনর্বাসন
  • নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়ে যান তাদের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। তাদের তথ্য ও ডাটাবেজ তৈরি জরুরি। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে এই তথ্য রাখার সক্ষমতা ও দায়িত্ব দিতে হবে। যারা ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদের আর্থিক সহায়তার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
  • নদীভাঙা পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী নারীপ্রধান পরিবারসহ কৃষি খাসজমিতে তাদের বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে হবে;
  • জাতীয় বাজেটে নদীভাঙা পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
১৬. প্রতিবন্ধী, বেদে, ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়াদের ভূমি অধিকার
  • শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ও হিজড়া বা ট্রান্স-জেন্ডার জনগোষ্ঠীর পারিবারিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষায় জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া;
  • এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণে আলাদা জনশুমারি পরিচালনার ব্যবস্থা করা।
  • প্রতিবন্ধী, বেদে এবং ট্রান্সজেন্ডার/ হিজড়াদের পরিপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডাটাবেজ করতে হবে;
  • তাদের অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
১৭. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভূমি অধিকার
  • অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত আপিল ট্রাইব্যুনালের ডিক্রি ৪৫ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসককে কঠোর নির্দেশ প্রদান। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিতে হবে;
  • আপিল ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া সব মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা জারি করা।
  • অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন কোনো অজুহাত না দেখানো হয় তার জন্য পরিপত্র জারি করে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা;
  • সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও প্রয়োজনে বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • ফেসবুকে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে এবং অন্যান্য অসিলায় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৮. আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ভূমি অধিকার
  • আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং নিরাপত্তা সুরক্ষা দিতে পরিপত্র জারি করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ;
  • এ ব্যাপারে তাদের ওপর হামলা, নির্যাতনের সব ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
  • আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ভূমি অধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ;
  • আহমদীয়া সম্প্রদায়সহ যে কোনো সংখ্যায় অল্প জনগোষ্ঠীর ওপরমহল বিশেষের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরি নিরাপত্তা সেল গঠন করতে হবে।
১৯. চা বাগানের শ্রমিকদের ভূমি অধিকার
  • চা বাগানের শ্রমিকরা ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনা ও মজুরি বৈষম্যের শিকার;
  • বাজারমূল্য বিবেচনায় চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে হবে;
  • চা বাগানের শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলার অধিকার দিতে হবে;
  • চা বাগান মালিক, শ্রমিক ও সরকার এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যেসব আদি জাতিগোষ্ঠী চা বাগানে বা তার সংলগ্ন পুঞ্জিতে ঐতিহাসিকভাবে শত বছর বা তারও বেশিকাল বসবাস করছে, তাদের কোনো অজুহাতেই উচ্ছেদ করা যাবে না। সরকারকে এই ঘোষণা দিতে হবে;
  • এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে আইন প্রণয়ন করতে হবে;
  • চা বাগানের অনাবাদি জমি চা শ্রমিকদের বন্দোবস্ত দিতে হবে;
  • চা শ্রমিকদের সন্তানদের মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
২০. দেশীয় উন্নত বীজ উৎপাদন
  • পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যবিরোধী বীজ, সার ও কীটনাশক আমদানি বন্ধ করতে হবে;
  • কৃষিপ্রযুক্তি এবং উন্নত বীজের ক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় পরিবেশসম্মত, খরা সহনশীল, লবণাক্ততা সহনশীল ধান, গম এবং সর্বোপরি পঞ্চব্রীহি ধানের বীজের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকারি নির্দেশনা জারি করা জরুরি।
  • অঞ্চলভিত্তিক উচ্চ ফলনশীল দেশজ বীজ ব্যবহারে কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্যোগকে উৎসাহিত ও জোরদার করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে;
  • কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণে জেলা-উপজেলায় কৃষি বিভাগ, বিজ্ঞানী ও নারী-পুরুষ কৃষকদের অংশগ্রহণে একটি সমন্বিত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে;
  • দেশীয় বীজ, সার ও কৃষিজ পণ্যের উন্নয়ন, বিপণন ও মান নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও মনিটরিংয়ের জন্য সমন্বিত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে;
  • কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
২১. উন্নত জাতের প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ও বিপণন
  • উন্নত জাতের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নারীসহ কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে;
  • জেলা পর্যায়ে উন্নত প্রাণিসম্পদ উৎপাদন/পালনের তথ্য কেন্দ্র স্থাপন এবং ওইসব প্রাণিসম্পদের সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে কৃষকদের সরাসরি অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
  • বেসরকারি পর্যায়ে কৃষিবিজ্ঞানী এবং কৃষকরা যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন তার প্রসারেও সরকারকে প্রণোদনা এবং সহায়তা করতে হবে;
  • গবেষণা ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন সম্প্রসারণে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে;
  • সব পর্যায়ে প্রান্তিক খামারিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং সমবায়ে কার্যকরভাবে উৎসাহিত করতে হবে।
২২. ভূমি প্রশাসনের সংস্কার
  • ভূমি সংস্কার বোর্ডকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে;
  • জাতীয় ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশনের পরামর্শক্রমে ভূমি সংস্কার বোর্ড এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে শক্তিশালী করতে হবে।
  • খাসজমিসহ ভূমির সুষম বণ্টন ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে;
  • ভূমি সেবাগ্রহীতাদের বিড়ম্বনা লাঘবে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
  • ভূমি সংস্কারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, তার মনিটরিং নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে;
  • বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা বৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
২৩. ভূমি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার
  • ভূমিকেন্দ্রিক মামলার জট নিরসনে ভূমি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা;
  • ভূমি মামলায় জড়িয়ে নিঃস্বপ্রায় কৃষকদের আইন সহায়তা কমিটির মাধ্যমে এককালীন সহায়তা দিতে হবে;
  • ভূমিদস্যু কিংবা স্বার্থান্বেষী সবার আইনি নিপীড়নের শিকার দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে;
  • বিচারিক আদালতের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে;
  • প্রযুক্তিগতসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সহজলভ্য করতে হবে;
  • নিম্ন আদালতের মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি এবং তার মান পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালতের তদারকি জোরদার করা;
  • আইন সংশোধন করে সহজ বিরোধের মামলাগুলো চিহ্নিত করে তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি জেলা পর্যায়ের আদালতেই শেষ করতে হবে;
  • ভূমি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের মামলা জট নিরসনে দক্ষতা বৃদ্ধিসহ গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় আনা;
  • আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রয়োগের পদ্ধতি সহজতর ও বিস্তৃত করতে হবে; দরিদ্র ও নারী কৃষকদের ভূমি মামলায় সহায়তা দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করা এবং তার প্রাপ্যতা সহজতর করতে হবে।
২৪. ল্যান্ড সার্ভে ও সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনাল
  • সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনালের কয়েক লাখ মামলার হয়রানির অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে;
  • অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দিয়ে সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমাণ মামলাগুলো দেওয়ানি আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনাল অবলুপ্ত করে এসব মামলা দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভু্ক্ত করতে হবে;
  • সার্ভে সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ দেওয়ানি আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে।
২৫. ভূমি আপিল বোর্ড ও দেওয়ানি আদালত
  • ভূমি আপিল বোর্ডের আইন সংশোধনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
  • যেসব মামলা আপিল বোর্ডে নিষ্পত্তি হওয়ার পরও দেওয়ানি আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তা আপিল বোর্ডে শুনানি না করে সরাসরি দেওয়ানি আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা;
  • বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি অবলম্বন করে ভূমি আপিল বোর্ডের মামলা সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। বাকি মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর করতে আইনের সংস্কার করতে হবে অথবা দেওয়ানি কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।
২৬. ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সেবা ও কার্যক্রম
  • ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের লোকবল ও দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে;
  • বিভিন্ন জেলার চরের জমির দিয়ারা জরিপ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিতে হবে;
  • মাঠপর্যায়ের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে মনিটরিং জোরদার করার জন্য একটি পরিপত্র জারি করতে হবে।
  • সার্ভে অ্যাক্টের ৩০ ও ৩১ ধারায় যারা সংশ্লিষ্ট থাকেন তাদের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে ঔপনিবেশিক আমলের সার্ভে অ্যাক্টের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে;
  • সার্ভে চলাকালে সার্ভে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা;
  • ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং রেকর্ডের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে জনসম্পৃক্ততা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা জরুরি।
২৭. বনভূমি ও পাহাড় সংরক্ষণ
  • বেদখলকৃত বনভূমি ও পাহাড় উদ্ধার কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা;
  • বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • বনের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধ করতে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
  • সুন্দরবনের ১৫ মাইলের মধ্যে স্থাপিত অবৈধভাবে অথবা দলীয় বিবেচনায় অনুমোদিত/নির্মীয়মাণ সব শিল্পকারখানার প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
  • বন বিভাগের দায়িত্ব, কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা;
  • টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় জনগণের অংশগ্রহণ বিশেষ করে বনবাসী জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে;
  • বন আইনের সময়োপযোগী সংস্কার করা এবং বন ও পরিবেশ আদালত গঠন করা;
  • বনের আদিবাসীদের ভূমির অধিকার সুরক্ষা দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
২৮. বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জেগে ওঠা চরভূমি উদ্ধার, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পরিকল্পনা
  • স্যাটেলাইট ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরের যথাযথ জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা;
  • ভূমি জরিপের পাশাপাশি এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিরূপণে এখনই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।
  • আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জেগে ওঠা চর ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ উপকূলে উদ্ভূত বিশাল চর সুরক্ষার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
২৯. শহর-নগর ও গ্রামাঞ্চলের আবাসন ব্যবস্থা
  • আবাসনের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিদ্যমান আছে তা নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা;
  • নগর ও গ্রামে আবাসনের বিশৃঙ্খলা রোধে বিধিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। একই সঙ্গে, বিত্তবানদের ইচ্ছেমতো ভূমির অপব্যবহার ও মফস্বল শহরের সরকারি আবাসনের জমি অপচয় বন্ধ করে বিপুল পরিমাণ জমি ফিরে পাওয়া সম্ভব এবং তা উদ্ধার করতে হবে।
  • সরকারি দপ্তর ও আবাসনের নামে জমির অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং যেসব জমি এরই মধ্যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো বাতিল করে খেলার মাঠ, বিনোদন পার্ক, শিশু পার্কসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে;
  • টেকসই ও পরিবেশসম্মত আবাসন নিশ্চিতে সরকারি গৃহনির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত ব্লকের ব্যবহার ও নকশাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিমালা, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • ইট তৈরি, পোড়ানো ও ব্যবহার অতিদ্রুত আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিকল্প ব্লক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত ও এর জন্য প্রণোদনা প্রদান।
৩০. জাতীয় বাজেট বরাদ্দ ও পরিকল্পনার অগ্রাধিকার
  • জাতীয় বাজেটে দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, কৃষিজীবী, আদি জাতিগোষ্ঠীর (সমতল ও পাহাড়ে) মানুষ এবং নারী কৃষকদের ও ভূমিহীনদের প্রণোদনা দিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া এবং খাত বা উপখাত হিসেবে নির্দিষ্ট করে বরাদ্দ দিতে হবে।
  • এ বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রকল্প/পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে;
  • স্থানীয় সরকার এবং অন্য যেসব সংস্থা এর দায়িত্বে থাকবে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
  • ভূমির সার্বিক ব্যবহার; ভূমির অপব্যবহার রোধ; পরিবেশের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ; নদী, জলাধার ও বনের সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যুগোপযোগী করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
৩১. ব্যাংক ঋণে দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারী কৃষকদের সহজতর অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ
  • ব্যাংক ঋণ নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষক, নারী কৃষক এবং আদি জাতিগোষ্ঠীর কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে;
  • এছাড়া কৃষি ও সম্প্রসারিত কৃষির (পশুপালন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি খামার ইত্যাদি) জন্য দরিদ্র কৃষক, নারী কৃষক ও সমবায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে জাতীয় কৃষিঋণ নীতিমালায় উপযুক্ত বিধান নিশ্চিত করতে হবে।
  • সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে দরিদ্র ও নারী কৃষকদের জন্য কৃষিঋণ প্রদানের জন্য ন্যূনতম হার নির্দিষ্ট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে;
  • প্রান্তিক কৃষক ও নারী উদ্যোক্তাদের জাতীয় কার্যক্রমে দক্ষভাবে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় প্রকল্প গ্রহণ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে;
৩২. নদী, জলাধার, পুকুর, বিল, হাওর রক্ষা
  • নদী, জলাধার, খাল, বিল রক্ষার ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ আরও জোরদার করা। সে ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করে পুকুর, বিল, হাওর, জলাধার ভরাট ও দূষণ রোধে কঠোর শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধের বিধান করে তা কার্যকর করতে হবে;
  • খাল, পুকুর, নদী ও জলাধার নিয়মিত খনন ও দ্রুত পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
  • প্রত্যেক জেলা, উপজেলা এবং স্থানীয় সরকারগুলোর আওতাধীন এলাকার হাওর, বিল, পুকুর, জলাধারের সংখ্যা, নাম, আকারসহ পূর্ণ তথ্যের ডাটাবেজ প্রত্যেক সংস্থার থাকতে হবে। ওইসব তথ্য প্রতি বছর অন্তর হালনাগাদ করার ব্যবস্থাও চালু করতে হবে;
  • নদী বা জলাধার থেকে বালু উত্তোলনের পরিবেশবিরোধী ক্ষতিকর পদ্ধতি নিষিদ্ধ করতে হবে; বালু উত্তোলন নীতিমালা সংশোধন ও তার বাস্তবায়ন কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে;
  • লবণাক্ত অঞ্চলে মিঠা পানির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে কাঠামো ও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে;
  • সুনির্দিষ্ট জরিপ ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতি বছর নদী, হাওর খননের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।
  • বর্ষাকালে মিঠা পানির অতিরিক্ত প্রবাহ সংরক্ষণের জন্য একাধিক জলাধার নির্মাণের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩৩. সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ
  • সমবায় আন্দোলনকে উৎসাহিত ও সহায়তা দিতে সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা-উপজেলায় নিবন্ধিত ও নিবন্ধনপ্রত্যাশী সমবায়ীদের গ্রামীণ অর্থনীতির উৎপাদনশীল কাজে অংশগ্রহণ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করতে হবে;
  • সমবায়ে উৎসাহী ও উদ্যোগী কৃষক, নারী উদ্যোক্তা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রণোদনা দিতে সরকারের নির্দেশনা জারি করতে হবে।
  • বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক সমবায় আইন (২০১৩) আমূল সংস্কার করে সমবায়ী, দরিদ্র ও নারীবান্ধব কার্যকর আইনে রূপান্তর করতে হবে।
  • ছোট কৃষক, বর্গা কৃষক, মৎস্য চাষি কিংবা পশু পালনে নিয়োজিত খামারিদের সমবায়ে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা, ঋণ সুবিধা এবং কৃষিবাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
  • একটি স্থায়ী জাতীয় সমবায় কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে সরকারি প্রতিনিধিসহ সমবায় বিশেষজ্ঞ এবং নারী, আদিবাসী, প্রান্তিক কৃষক ও জেলের মতো সমবায়ীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং কমিশনের অধীনে সমবায় কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে;
৩৪. স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭
  • অবিলম্বে সাধারণ কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন বিভিন্ন সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং প্রান্তিক কৃষক প্রতিনিধিসহ সব অংশীজনের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে এ আইনের সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করা এবং অধ্যাদেশ আকারে তা জারির উদ্যোগ নেওয়া;
  • দুই ফসলা, তিন ফসলা উর্বর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা এই আইনে নিষিদ্ধ করা, ইতিমধ্যে এ ধরনের জমি অধিগ্রহণ করা হয়ে থাকলে তা বাতিল করা।
  • ভূমি অধিগ্রহণ আইনে যারা অতীত বা বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব পরিবারের তালিকা প্রস্তুত ও একটি ডাটাবেজ করা;
  • যারা প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাননি তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন;
  • ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং আইন অনুযায়ী তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করা।
৩৫. বাজার ব্যবস্থাপনা
  • কৃষিপণ্য ও ফসলের বাজার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং জোট গঠন করে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
  • ধান, গম, আলু প্রভৃতির ন্যূনতম মূল্য কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য রোধ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কাঠামো জাতীয় থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করে এর কার্যকারিতা, প্রসার ও সক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে;
  • এ কাঠামোর উন্নয়ন ও গবেষণা চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের জন্য প্রণোদনা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে;
  • ধান, গম, আলু প্রভৃতি যারা উৎপাদন করেন সেসব কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে মূল্য সমর্থন (Price support) সহায়তা দিতে হবে; এর জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
৩৬. কৃষিতে সেচ ব্যবস্থাপনা
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী তিন বছরের মধ্যে কৃষি, শিল্প, ওয়াসা ও পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ধীরে ধীরে ন্যূনতম পর্যায়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করতে হবে;
  • ভূগর্ভস্থ পানির অব্যবস্থাপনা রোধে এর ব্যবহারের ওপর পর্যায়ক্রমে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে;
  • মহানগর, পৌরসভা, শিল্পকারখানা ও সেচ ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে;
  • বিকল্প হিসেবে নদী, খাল, বিলের পানি সেচ ও শিল্পে ব্যবহারের জন্য সুরক্ষিত করতে হবে এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ দ্রুত কমাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে দুই-তিন বছরের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
  • ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারের একটি আলাদা নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • ছোট, মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সমবায়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশজ লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে;
  • কম পানির প্রয়োজন হয় এমন ফসল (যেমন গম) চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে হবে এবং গবেষকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে;
  • এ ব্যাপারে কৃষি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, নীতিনির্ধারক, সমাজকর্মী এবং খোদ কৃষকদের সমন্বয়ে জোট গঠন করে তার মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

থামছেই না পদ্মার ভাঙন

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় শ্রমিকের মৃত্যু

ঢাবিতে কয়রা ছাত্রদের সংগঠন ডুসাকের নতুন কমিটি

বাকশাল সিপিবির বিচার চান এনসিপি নেতা তুহিন

আইপিএলে ফিরতে চাচ্ছেন না অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ

সারা দেশে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস 

জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদি, উপস্থিত ৩ বাহিনীর প্রধান

গাজা যুদ্ধের সমাধান খুঁজছে জার্মানি

বিমানবন্দরে সোনারগাঁও আ.লীগের সহসভাপতি গ্রেপ্তার

১০

চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

১১

ভেলপুরি খেয়ে হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক

১২

আফগানিস্তানে দাবা খেলা নিষিদ্ধ

১৩

ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসছিল নিখোঁজ ২ ভাইয়ের মরদেহ

১৪

আবারও রেকর্ডের পথে রেমিট্যান্স

১৫

দালালদের দখলে কুয়াকাটা বিদ্যুৎ অফিস

১৬

চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দিল ভারত, পাকিস্তানে বন্যার শঙ্কা

১৭

দিনাজপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২

১৮

সিভিল সার্জনরা চাইলেই চিকিৎসাসেবার মান উন্নতি সম্ভব : প্রধান উপদেষ্টা

১৯

অবশেষে নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করল কুর্দিরা

২০
X