প্রতি মাসে রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৈঠকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিয়ে থাকেন। কেউ নামে বা কেউ বা সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হয়ে থাকেন।
টানা ছুটি শেষে রোববার (১৫ জুন) এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আয়কর অনুবিভাগের মিটিং হয়েছে। তবে এই মিটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের নাম ব্যবহার করে কেউ কেউ বৈঠকে যুক্ত হয়েছেন। তবে এর বাইরে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যনিটারিসহ বিভিন্ন নাম দেখা গেছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আলাদা করে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে সরব ছিলেন। একইসঙ্গে চেয়ারম্যানের অপসারণের আগ পর্যন্ত তাকে অসহযোগিতা করারও ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। যদিও এর ফাঁকে বাজেটের কাজে এনবিআর চেয়ারম্যান কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় অফিস করেন। টানা ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিসে রাজস্ব সভা করেন। আর এই ভার্চুয়াল সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের নাম সংবলিত আইডি দিয়ে মিটিংয়ে যোগ দেন কিছু কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলতে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সভায় বেশি লোকের উপস্থিতি দেখাতেই এমনটা করা হয়েছে। সভায় এমন আরও অনেক আইডি থেকে সভায় যোগ দেওয়া হয়েছে, যাদের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। আইডিতে স্যামসাং ফোনের বিভিন্ন মডেলের নাম, বিভিন্ন সালের নাম ও নানা ধরনের সংখ্যা দিয়ে সভায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আয়কর কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, অধ্যাদেশ বাতিলসহ চারটি দাবিতে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল। সরকারি আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও চেয়ারম্যানকে অপসারণ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এরপর চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্ব-শরীরে ঢাকার বিভিন্ন কমিশনার সভায় অংশ নিলেও মাঠপর্যায়ে অসন্তোষ আছে। তাই জুমে বেশি উপস্থিতি দেখাতেই এমনটা করা হয়েছে। তারা বলেন, পরে দেখা গেছে মিটিংয়ে ইলন মাস্কও উপস্থিত! চারশর বেশি অংশগ্রহণকারীর সিংহভাগই ভুয়া। তাদের আয়কর বিভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত আয়কর খাতে আদায়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এ সময়ে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলণায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে অর্থবছরের মে মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে শেষ ১৫ দিনে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের নির্দেশনা দেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় রাজস্ব আদায় কম হলেই কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোরতা দেখাতেন চেয়ারম্যান। তবে এবারের সভায় রাজস্ব আদায়ে ধস হলেও নমনীয় আচরণ করেছেন তিনি।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা পর্যন্ত তাকে অসহযোগিতা করা হবে। তিনি প্রথমে এনবিআরে আসতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। কর্মকর্তারাও তার কথা শুনছেন না। তিনিও কিছু বলতে পারছেন না। সামগ্রিকভাবে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় তাকে দায়িত্বে রাখা রাজস্ব খাতের জন্য ভালো হবে না বলেও অভিযোগ করেন একাধিক কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন