হিন্দু ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈষম্যের অবসান হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। নতুন বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চরম বৈষম্যের মুখোমুখি। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার এই বৈষম্য নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর খিলক্ষেতে সার্বজনীন দুর্গা মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া, যশোরের অভয়নগরে বর্বরোচিত হামলা, ধর্মীয় অবমাননার অজুহাত তুলে লালমনিরহাটে নিম্ন আয়ের একটি পরিবারের বাবা ও ছেলেকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা, প্রশাসনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথিত প্রতিশোধমূলক আচরণসহ সারা দেশে সহিংসতার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে খিলক্ষেতে অনতিবিলম্বে সার্বজনীন দুর্গা মন্দির পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করাসহ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান নেতারা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্মসূচিতে সংহতি জানায়।
ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, স্কুল-কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদের অপমানিত করা হচ্ছে। তাদের নানানভাবে হয়রানি করে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য। সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অবসরে পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি- হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের বাড়িঘরে আক্রমণ হবে না; মুক্তিযোদ্ধা ও চাকরিজীবীদের ওপর আক্রমণ হবে না। শিক্ষকরা আর অপমানিত হবেন না, সরকারি চাকরিজীবীরা বৈষম্যের শিকার হবেন না। সরকারকে বলব, আগামী দিনে আমাদের আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। আজকে এটাই হবে আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, প্রত্যাশা।
ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. শ্যামল কুমার রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, জয়ন্ত সেন দিপু, দীপেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জী, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সম্পাদক রবীন্দ্র নাথ বসু, আইন সম্পাদক অপূর্ব ভট্টাচার্য, সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অনুপ কুমার সাহা, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ হালদার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ড. এম কে রায়, নিউটন অধিকারী, ঐক্য পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অতুল চন্দ্র মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক হৃদয় চন্দ্র গুপ্ত, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব প্রশান্ত বিশ্বাস, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক জয় রাজবংশী, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিপংকর চন্দ্র শীল, খিলক্ষেত সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের পূজারী সবিতা রানী প্রমুখ।
পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাবের আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ দিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও বৈষম্যের অবসান হয়নি, বরং অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। রাজনৈতিক পরিবর্তন দেশে যাই ঘটুক, হামলা হয় আমাদের উপর। এ অবস্থা চলতে পারে না। ৫৪ বছর ধরে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখেছি। গত ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে মনে প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছিল যে, এবার আমরা আর রাস্তায় থাকব না। কিন্তু রাস্তায়ই আমাদের জোরালো প্রতিবাদ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছিলেন, তা হচ্ছে না। তিনি (ড. ইউনূস) বলেছিলেন, বৈষম্য থাকবে না। ১১-১২টা কমিশন হয়েছে, সেখানে আমাদের জায়গা হয়নি। আমাদের অভিমত শুনতে চাওয়া হয়নি। এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন