রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেছেন, অভ্যুত্থানের বাংলাদেশ আজ কঠিন সংকটের মুখোমুখি। সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ব্যর্থতায় এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে দেশ আজ বিভেদ-বিচ্যুতির এক চরম বিপদের মুখোমুখি। তবে সব সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংস্কার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ ও ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি অ্যালায়েন্স’-এর যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বিভেদ ও বিচ্যুতির পথ ছেড়ে দায়িত্বশীল রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, পাহাড়ি, দলিত, হরিজনসহ সব জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রকর্মে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্রের মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অনেক সংকট কেটে যাবে। এর দায়িত্ব এই বঞ্চিত সম্প্রদায়গুলোকেই নিতে হবে। তাদেরই রাষ্ট্র গঠনে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সে উদ্যোগে সহায়ক হতে হবে। সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। এ সময় তিনি সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আলাদা কমিশন গঠনেরও দাবি জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, রাষ্ট্র আমাদের জনগণকে ভোটার বানিয়েছে, নাগরিক হতে দেয়নি। নাগরিক হয়ে উঠতে, নাগরিক অধিকার চাইলে আমাদের জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের রাষ্ট্র বানাতে হবে।
লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারাই অবহেলা-অবজ্ঞা করেছে, সবাইকে অনেক অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সংখ্যালঘুদের জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের হিস্যা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মাইনরিটি অ্যালায়েন্সের সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র বলেন, একটা রাষ্ট্রের সংবিধানে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু বা আদিবাসী—সবার সমান সুযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই দেশে আজ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর যত নির্যাতন এবং হত্যা হয়েছে, তার বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। এমনকি রাষ্ট্র সংস্কারে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিও রাখা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই দেশ গঠনে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংখ্যালঘুদের অনেক অবদান রয়েছে। তার পরও প্রতিনিয়ত নানা অত্যাচারের কারণে তাদের ভারতে চলে যেতে হয়। রাষ্ট্রের কাছে আমরা সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই। রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ মাইনরিটি অ্যালায়েন্সের সংগঠক অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনে সব ধর্ম-বর্ণের লোক নির্দিষ্ট সংখ্যানুপাতিক হারে রাখা হয়নি। সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুরক্ষার ব্যাপারে আইন যুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা সবাই যেন বাঙালি হিসেবে বসবাস করতে পারি এবং সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারি। অনেকেই বলেন, আমরা (হিন্দু সম্প্রদায়) নাকি এক পা ভারতে এবং আরেক পা বাংলাদেশে রাখি—এ কথাটি সত্য নয়। সবার মতো আমরাও এই দেশকে ভালোবাসি এবং রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যেতে চাই।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবং উপস্থিত ছিলেন লেখক ও শিক্ষক হেলাল মহিউদ্দিন, বিবেকানন্দ গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ মজুমদার, লিংকন দত্ত, নরেন্দ্রনাথ হীরা, সেলিম খান, কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, শ্রীশ্রী হরিচাদ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপীন্দ্রনাথ হিরা, অ্যাডভোকেট প্রহল্লাত দেবনাথ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লামিয়া ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন