এশিয়া কাপ ২০২৫ আয়োজনে শঙ্কার মেঘ জমেছে। সেপ্টেম্বরের এই বহুজাতিক ক্রিকেট আসরের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবার, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) গুরুত্বপূর্ণ সভায়। তবে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও অভ্যন্তরীণ তৎপরতার কারণে সভাটিই এখন অনিশ্চয়তায়।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও সুপারের দাবি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পরিকল্পিতভাবে এশিয়া কাপের আয়োজন বানচালের চেষ্টা করছে। টুর্নামেন্ট বাতিল হলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রায় ১২৫ কোটি পাকিস্তানি রুপি (পিকে আর) আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
এ নিয়ে পিসিবির চেয়ারম্যান ও এএসিসির বর্তমান সভাপতি মহসিন নকভির নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও চাপ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভারত ছাড়াও শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ঢাকায় সভা অনুষ্ঠানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এএসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সভা বৈধ করতে হলে অন্তত তিনটি পূর্ণ সদস্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের উপস্থিতি এবং মোট দশটি পূর্ণ কিংবা সহযোগী সদস্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের বিরোধিতায় এই কোরাম পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা সভাটিকে অকার্যকর করে তুলতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত যদিও আসন্ন এশিয়া কাপের স্বাগতিক নামেই থাকছে, তবুও বিসিসিআই ঢাকায় এএসিসি সভা আয়োজনের বিরোধিতা করছে। এখন পর্যন্ত তারা ভার্চুয়ালি যোগ দেবে কি না, সেই বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। এতে করে টুর্নামেন্টের সময়সূচি ও আয়োজক দেশ চূড়ান্ত হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা মহসিন নকভি আফগানিস্তান সফরে যান। যদিও সফরের আনুষ্ঠানিক কারণ ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা, তবে ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে, এশিয়া কাপের বিষয়ে আফগানিস্তানের সমর্থন পেতেই নকভির এই কূটনৈতিক উদ্যোগ।
তবে আফগানিস্তান অতীতে ভারত-ঘনিষ্ঠ অবস্থানেই ছিল। দেরাদুনে তাদের হোম ভেন্যু থাকাসহ একাধিক কারণে আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই ভারতকে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এশিয়া কাপ বাতিল হলে আর্থিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে পিসিবি। এ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টসহ এশিয়া কাপ থেকে তাদের প্রায় ৮৮০ কোটি রুপি আয়ের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে শুধু এশিয়া কাপ থেকেই প্রত্যাশিত আয় প্রায় ১১৬ কোটি রুপি। তাছাড়া আইসিসির বরাদ্দ থেকেও পিসিবি বছরে প্রায় ২৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭৫০ কোটি রুপি) ব্যয় করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।
ঢাকায় এএসিসি নির্বাহী বোর্ডে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা ও তদারকির জন্য সাবেক পিসিবি সিওও ও পরামর্শক সালমান নাসিরকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মহসিন নকভি। তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং সভা আয়োজনের বিষয়টি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়েও কমেনি। তিন দিন আগেই বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (WCL) ২০২৫-এ ভারতীয় দল পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলস্বরূপ, সেই ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হন আয়োজকরা।
সব মিলিয়ে এশিয়া কাপে রাজনৈতিক জটিলতা ও কূটনৈতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবারের সভা যদি অনুষ্ঠিত না হয় কিংবা বাতিল হয়, তাহলে পাকিস্তানের জন্য এটি হবে কেবল কূটনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও বড় ধাক্কা।
মন্তব্য করুন