জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে একটি দলের প্রত্যাশিত জুলাই সনদ উপস্থাপন করা হলে জাতি সে সনদ প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর পল্টন মোড়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর জাতি নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি আরও বলেন, এই দাবির প্রতি দেশের জনগণের সমর্থন দেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে।সব সংস্কার কমিশনকে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করলেও একটি দল নিজেদের রাষ্ট্রের মালিক মনে করে সরকারকে যথাযথ সহযোগিতা করছে না। তারা সংস্কার চায় নিজেদের মতো করে। জুলাই যোদ্ধাদের গণঅভ্যুত্থানের আইনি স্বীকৃতির মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবরূপ দিয়ে ফ্যাসিবাদের পথ চিরতরে বন্ধ করতে জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক সচেতন সব নাগরিক দাবি জানিয়েছে। জাতির প্রত্যাশিত ঘোষণাপত্র উপস্থাপিত না হলে, জনগণ সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্র মেনে নিবে না।
তিনি যোগ করেন, একটি দল ক্ষমতায় গিয়ে সব সংস্কার মুছে দেওয়ার ঘোষণায় জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভূমিকায় আবির্ভূত হতে চায়। বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হতে দিবে না।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃশ্যই জুলাই যোদ্ধাদের প্রশান্তি এনে দেবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন সেই মহান নেতা ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। বৈষম্যহীন, ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের এক কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন বাংলাদেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতির কোনো স্থান হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নেমে আসবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান জুনের পর তিনি একদিনও ক্ষমতায় থাকবেন না বলেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার পরবর্তীতে তিনি একটি দলের সাথে বিদেশের মাটিতে আলাদা বৈঠক করে আবার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচন যখনই হোক আগে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেভাবে গণভোট দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে বৈধতা দিয়েছেন , একইভাবে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতায় কারোরই আপত্তি থাকার কথা নয়।
মন্তব্য করুন