রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) মন্ত্রী-এমপি ও তথাকথিত ক্ষমতাবানদের প্লট দিতে গিয়ে বন কেটে পূর্বাচল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি রাজউকের বন কাটার এ সিদ্ধান্তকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের ‘একটি টেকসই জীবন : বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর তাপের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের তথাকথিত ক্ষমতাবানদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক ক্ষতি করে ফেলেছে। বন কেটে ফেলে প্লট করা হয়েছে। যখন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান করা হয়, তখন ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে এর বিরোধিতা করে। রাজউককে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গাছ কেটে করা এসব প্লটের বেশিরভাগ এখনো অব্যবহৃত রয়েছে। ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়নে রাজউককে দায়িত্ব নিতে হবে। ভালো পরিকল্পনা করা হলেই ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থ নিয়ে হাজির হয়।
এদিকে, তাপমাত্রার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, উষ্ণ আবহাওয়ার ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকার হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। শুধু ২০২৪ সালেই তাপজনিত শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ০.৪ শতাংশের সমান।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ সময়। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায়। ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জাতীয় গড় বৃদ্ধির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং উৎপাদনশীলতার হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে প্রমাণভিত্তিক নীতি প্রণয়ন ও সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে বলেন, চরম গরম কেবল মৌসুমি অসুবিধা নয়, এটি স্বাস্থ্যের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও সামগ্রিক সমৃদ্ধির জন্যও বড় হুমকি। তবে সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন অনুসারে, মানুষ, জীবিকা ও অর্থনীতিকে ক্রমবর্ধমান তাপঝুঁকি থেকে সুরক্ষায় দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেদনের সুপারিশে রয়েছে- জাতীয় প্রস্তুতি জোরদার করা, স্বাস্থ্যসেবায় তাপজনিত রোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি, শহরে সবুজায়ন বাড়ানো এবং আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সঠিক তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের গুরুত্বও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মন্তব্য করুন