সরকার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো মিলে-মিশে একাকার হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবহন সেক্টর পরিচালনা করায় বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানী অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রীদের অধিকার চাই শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় না থাকায়, নানাভাবে হয়রানির শিকার দেশের যাত্রীরা প্রতিকার পান না। এতে দেশের যাত্রী সাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হওয়ায় নাগরিক সমাজের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণ তথা জনসাধারণের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ না রাখায় এই আইন বাস্তবায়নের দীর্ঘ ৪ বছরেও নতুন আইন ও পুরনো আইনের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এবারের যাত্রী অধিকার দিবসে সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রীদের অধিকার চাই এই দাবিকে সামনে আনা জরুরি বলে মনে করেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, যোগাযোগ সেক্টরের অবকাঠামো বিনির্মাণে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সড়কে শৃংঙ্খলা প্রতিষ্টা ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতিবছর সড়কে ২৪ হাজার ৯৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটছে। যোগাযোগ সেক্টরে অবকাঠামো নির্মাণে লাখো কোটি টাকা ব্যয় হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের শহর ও শহরতলীতে যাতায়াতে মানসম্মত গণপরিবহন নেই। রাজধানীতে কয়েক দশক ধরে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে সাড়ে চার কোটি ট্রিপ যাত্রী অস্বাভাবিক ভোগান্তি নিয়ে লাখ লাখ নগরবাসী প্রতিদিন যাতায়াত করছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেন মালিকদের প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রেতা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে বাস মালিকদের সংখ্যা অনুপাতে যাত্রী বা ভোক্তা প্রতিনিধি রাখার বিধান থাকলেও সড়ক আইন অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে মালিক- শ্রমিক সরকার মিলে মিশে তা নির্ধারণ করছে। এতে কখনো কখনো সরকার বাস মালিকদের পকেটে ঢুকে পরে ইচ্ছে মতো ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সভায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পাটি সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছা খানম বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে আইনি সুরক্ষা প্রয়োজন অথচ সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী স্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আমরা দীঘদিন যাবৎ যাত্রী অধিকার প্রতিষ্টার জন্য বারবার দাবী তুলছি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। অথচ সরকার সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী সাধারণের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ রাখেনি।
বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, মানবাধিকার সংগঠক মনজুর হোসেন ইশা, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, মোহাম্মদ মহসিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন