

ফর্টিফাইড রাইস হলো এমন চাল যাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস) পরিমাণ বাড়ানো হয়। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো চালের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা এবং চাল গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপুষ্টি ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের অভাব (যেমন : আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া) মোকাবিলা করা।
এ ধরনের চাল উৎপাদন নিয়ে কাজ করছে টেকনোসার্ভ পরিচালিত মিলার্স ফর নিউট্রিশন কোয়ালিশন। তারা মঙ্গল ও বুধবার (২৮-২৯ অক্টোবর) কক্সবাজারের হোটেল উইন্ডি টেরেসে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। ফর্টিফাইড রাইস কার্নেল (এফআরকে) উৎপাদনের জন্য ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএসএমএস), কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিষয়ক দুই দিনের এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাস্তবভিত্তিক দিকনির্দেশনা প্রদান, যা অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি চিহ্নিত করা, মাণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার পথে সক্ষম করে তোলে। দেশের ১৩টি এফআরকে ফ্যাক্টরির প্রতিনিধিরা প্রশিক্ষণে অংশ নেন। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফর্টিফিকেশন মানদণ্ড পূরণে উচ্চমানের ফর্টিফাইড চাল উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেন।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন টেকনোসার্ভের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. গুলজার আহম্মেদ, কান্ট্রি ম্যানেজার (ডিএসএম-ফারমেনিস) মো. মুহাম্মদ নাজমুল আলম, ডব্লিউএফপির প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান ও নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. আকিব আবরার। বক্তারা টেকসই শিল্পায়নের জন্য ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেন। তিনি সরকারের চলমান চাল ফর্টিফিকেশন কার্যক্রমে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ফর্টিফাইড রাইস কার্নেল (এফআরকে) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গুণগতমানসম্পন্ন এফআরকে সরবরাহ প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ফুড ফর্টিফিকেশন ইকোসিস্টেম জোরদারে টেকনোসার্ভের অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় টেকনোসার্ভ-এর সিনিয়র ফুড ফোর্টিফিকেশন স্পেশালিস্ট মো. নাঈম জোবায়ের এবং ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কনসালট্যান্ট মো. মাহাদি হাসান এফএসএসসি ২২০০০, গুড মেনুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি), হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ক্রিটিকাল কন্ট্রোল পয়েন্ট (এইচএএসসিপি), অপারেশনাল প্রিরিকুইজিট প্রোগ্রাম (ওপিআরপি), হাইজিন ম্যানেজমেন্ট, জরুরি প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ অডিট পদ্ধতিসহ খাদ্য নিরাপত্তা ও মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান শেষে টেকনোসার্ভ ও তার সহযোগী সংস্থা— ডব্লিউএফপি, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল ও ডিএসএম-ফারমেনিস তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে। অংশগ্রহণকারীরা এফএসএসসি সার্টিফিকেশন ও ডকুমেন্টেশন সিস্টেম সম্পর্কে কার্যকরী তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করেন, যা তাদের মানসম্পন্ন এফআরকে উৎপাদন ও সরবরাহে সহায়তা করবে।
মিলার্স ফর নিউট্রিশন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্টিফিকেশন পার্টনার : বিএএসএফ, বায়োঅ্যানালিট, বুলার, ডিএসএম-ফারমেনিস, ম্যুলেনকেমি, স্টার্নভিটামিন; আঞ্চলিক সহযোগী: হেক্সাগন নিউট্রিশন, পিরামাল, সাংকু এবং ক্রমবর্ধমান স্থানীয় কারিগরি অংশীদারদের সমন্বয়ে, যারা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে সমাজসেবা ও ব্যবসায়িক স্থায়িত্বে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উদ্যোগটি পরিচালিত হচ্ছে টেকনোসার্ভের মাধ্যমে এবং গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে। মিলারস, খাদ্য ফর্টিফিকেশন সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ আগ্রহী সবাই কোয়ালিশনে যুক্ত হওয়ার জন্য এবং বিস্তারিত জানতে millersfornutrition.com ওয়েবসাইটে ভিজিট করার অনুরোধ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন