

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং কানাডার প্রাচীনতম মুসলিম ত্রাণ সংস্থা হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (এইচসিআই) ও হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মানব পাচার, মানব পাচারের প্রচেষ্টা এবং অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে যৌথ প্রকল্প শুরু করেছে।
সর্বমোট ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো শরণার্থী শিবিরে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা জোরদার করা এবং মানব পাচারের প্রতিরোধ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশে আইওএমের দীর্ঘদিনের মানব পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি ৩৩টি শিবিরে সমন্বিত ও সমান সেবা প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুরক্ষা কার্যক্রমে সমন্বয় ও মানদণ্ডের সামঞ্জস্যতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
এই প্রকল্পের আওতায় মোবাইল প্রটেকশন টিম গঠন করা হবে যারা লক্ষ্যভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, মানব পাচারের ভুক্তভোগীদের শনাক্ত ও সহায়তা দেবে এবং সুরক্ষাসংক্রান্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করবে। এ ছাড়া কমিউনিটি নেতা, স্বেচ্ছাসেবক এবং তরুণদের প্রশিক্ষিত করা হবে যাতে তারা পাচারের ঝুঁকি শনাক্ত করে নিরাপদ উপায়ে রিপোর্ট করতে পারেন- যার মাধ্যমে কমিউনিটি-ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হবে।
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান ল্যান্স বোনো বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো যেন প্রতিটি শরণার্থী সমান সুরক্ষা সেবা ও সহায়তা পেতে পারে। নিজ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় নেতাদের মানবপাচার সম্পর্কিত ঝুঁকি শনাক্ত করা ও সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আইওএম বাংলাদেশের সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং মানবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে মানব পাচারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সুরক্ষা, সহায়তা ও ক্ষমতায়ন পেতে পারেন।
হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (এইচসিআই)-এর গ্লোবাল সিইও মাহমুদা খান বলেছেন, আমাদের বিশ্বাস করতে শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে এবং সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে রক্ষা করতে। দাতাগোষ্ঠীদের পক্ষ থেকে এইচসিআই সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার মূল্যবোধকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা শুধু শোষণ থেকেই সুরক্ষিত না বরং নিরাপদ ও আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষমতায়নও পায়।
আইওএমের নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফিলানথ্রপি ফান্ড (আইপিএফ)-এর সূত্র ধরে জাতিসংঘের এই সংস্থার সঙ্গে এইচসিআইয়ের এই অংশীদারত্ব বৈশ্বিক মানবিক সহযোগিতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আইপিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ধর্মভিত্তিক অনুদান বিশেষ করে জাকাত ও সাদকার টেকসই মানবিক উদ্যোগে ব্যবহারের জন্য। এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে এইচসিআই এমন একটি নির্বাচিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হলো যারা আইওএমের সঙ্গে মিলে বিশ্বাসভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে চলমান সবচেয়ে জরুরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে কাজ করে।
বাংলাদেশে, এই প্রকল্পটি আইওএমের চলমান মানব পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রম যেমন সচেতনতামূলক প্রচারণা, কেস ম্যানেজমেন্ট, এবং সমন্বয় সহায়তাকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ছাড়া এই অংশীদারত্ব আইওএমের সুদান, লিবিয়া এবং ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশে পরিচালিত মানবপাচার প্রতিরোধ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের পরিধি বাড়াবে, যা দুর্বল জনগোষ্ঠীকে নির্যাতন ও শোষণ থেকে রক্ষার বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
মন্তব্য করুন