রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহাল তবিয়তে আছেন সাংবাদিক নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের সেই কর্মীরা। এদিকে কলেজ প্রশাসনও কোনোরকমে আশ্বাস দিয়ে দায় এড়িয়েছেন। মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট থাকায় কবে নাগাদ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা বলতে নারাজ কলেজ প্রশাসন।
এদিকে দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টাস ইউনিটি।
এ ছাড়াও বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি, চুয়েট সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামসহ দেশের আরও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ছাড়াও নিন্দা জানিয়েছে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো।
মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, মারধরের বিষয় নিয়ে সাংবাদিক সমিতির কয়েকজন আমাকে অভিযোগ দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কতো সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে নারাজ কলেজ অধ্যক্ষ।
সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর বলেন, ঘটনার পর দিনই আমি কেন্দ্রে অভিযুক্তদের তালিকা দিয়েছে। আশা করি শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কবি নজরুল কলেজে সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে মারধর করছিল। ঢাকা ওয়েভের প্রতিবেদক ও কবি নজরুল কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক শীতাংশু ভৌমিক অংকুর ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ফোন কেড়ে নেয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তাকে মারধর শুরু করে। এসময় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য পার্থ সাহা এগিয়ে গেলে তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর কলেজ মসজিদের সামনে শীতাংশুকে দ্বিতীয় দফায় আবার মারধর করা হয়।
অভিযুক্ত সবাই কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগরের অনুসারী। তারা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান পলাশ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফাহিম তাজ, দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শেখ সুমন, ইতিহাস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের তানজিদ আহমেদ বাবু, দ্বাদশ শ্রেণির মামবিক শাখার ২০২১-২২ সেশনের রাতুল, এবং দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের তামিম মোল্লাসহ আরও ১০/১৫ জন।
মন্তব্য করুন