বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দলটি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চললেও কাগজে কলমে বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। চলুন দলটির প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
৩৬ পেরিয়ে ৩৭ বছরে পা রেখেছে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। ১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়। সেই ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মতিন। ২১ প্রেসিডিয়ামসহ নির্বাহী কমিটির আকার ছিল ৬০১ জন।
জাতীয় পার্টির মতো আর কোনো রাজনৈতিক দল দফায় দফায় ভাঙনের শিকার হয়নি। দল থেকে বের হয়ে প্রথম পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন মিজানুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয় নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে। সবশেষ পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন প্রয়াত কাজী জাফর আহমদ। বর্তমানে জাতীয় পার্টির—জাতীয় পার্টি (জাপা), জেপি, বিজেপি ও জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে চারটি ধারা বিদ্যমান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। কিন্তু এর দুমাস পর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে মন্ত্রীদের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে এভাবে দেশ চলতে পারে না বলে বার্তা দেন। বিচারপতি সাত্তারকে বার্তা দেওয়ার পর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্র তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখলের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তিনি বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন জারি করেন। এরপর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন দমনচেষ্টার পাশাপাশি নিজে রাজনীতিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তৎপর হন এরশাদ। এর অংশ হিসেবে তিনি ১৯৮৬ সালের শুরুতে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। সেই দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে একতরফা নির্বাচন করলেও গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের শাসনের পতন হয়। তিনি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এরশাদের শাসনামলে দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন, খুন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ইত্যাদি ছিল না। মানুষের মনে স্বস্তি-সুখ-শান্তি ছিল। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, সংস্কার, সুশাসন ইত্যাদির মাধ্যমে এরশাদ দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নেন। এ ছাড়া ১৯৯৬-০১, ২০০৮-১৩ এবং ২০১৪-১৯ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে দলটি।
জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি জি এম কাদের নামেই বেশি পরিচিত। এরশাদের মৃত্যুর পর তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। তিনি বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। বর্তমানে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ চলছে বলেও শোনা যায়। যদিও দলের অন্য নেতাদের দাবি, এ বিরোধ অনেকটা কমে এসেছে।
মন্তব্য করুন