প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাচ্ছেন আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোর পথে ফিরে আসা ৭ জেলার তিন শতাধিক চরমপন্থি সদস্য। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা র্যাব-১২ সদর দপ্তরে এই অনুদানের চেক বিতরণ করবেন র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) র্যাব-১২ অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন বলেন, গত ২১ মে আত্মসমর্পণ করা সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল জেলার চরমপন্থি সদস্যদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের চেক বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, এদের মধ্যে কেউ কেউ জামিনে মুক্ত রয়েছেন। কেউ জেলেও রয়েছেন। প্রতিজন চরমপন্থি সদস্যকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।
জানা যায়, মার্কস-লেলিন ও মাওবাদী আদর্শের নামে সক্রিয় ১৪টি চরমপন্থি সংগঠনের দাপটে তটস্থ ছিল এসব অঞ্চল। এর মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এম এল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ) অন্যতম। চরমপন্থি শীর্ষ নেতারা তরুণ সমাজকে ভুল বুঝিয়ে দলে টানে এবং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আলাদা রাজত্ব কায়েম করত। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মানুষকে।
র্যাব জানায়, ২০২০ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদকে চরমপন্থিদের আগ্রাসন থেকে রক্ষায় তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। র্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা বেশ কয়েকটি সক্রিয় দলের নেতা প্রায় তিন শতাধিক সদস্য ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ২১ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন র্যাব মহাপরিচালক। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করে তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রতিজনকে এক লাখ করে টাকা মোট ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার অনুদান মঞ্জুর করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাওয়ার খবরে আবেগে আপ্লুত চরমপন্থি সদস্যরা। তারা প্রধানমন্ত্রী ও র্যাব সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
আত্মসমর্পণকারী দলের সদস্য সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আব্দুর রহমান, বাতেন, উল্লাপাড়ার শামসুল ও আল-আমিন, সলঙ্গার জামাল ও বগুড়ার গোলাম রব্বানীসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আত্মসমর্পণের পর তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। এদের অনেকেই সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে, কেউ বা ওয়ার্কশপে কাজ করে আবার কেউ বা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান। কেউ কেউ ইতিমধ্যে মুদি দোকান দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্বাভাবিকভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন আর পুলিশের ভয়ে বা প্রতিপক্ষের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় না বলে জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী তাদের অনুদান দেওয়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চরমপন্থি দলের সাবেক এসব সদস্যরা।
আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি দলের নেতা মোহাম্মদ সাধু বলেন, স্বাভাবিক জীবনে অনেক শান্তি। পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করলে কোনো টেনশন নেই। সত্যিই এতদিন আদর্শের নামে অন্ধকার পথে ছিলাম আমরা। র্যাব আমাদের আলোর পথে নিয়ে এসেছে।
মন্তব্য করুন