প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছ্নে, আমরা সিসিটিভির মাধ্যমে সব কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। কোনো ভোটার যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারেন তাহলে আপনারা চিৎকার দিবেন। আমরা সেখান থেকে বসে ব্যবস্থা নিব।
আজ শনিবার (১০ জুন) দুপুর ২টার দিকে সিলেট মহানগরীর মেন্দিবাগের জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, ইভিএমে কোনো ভূত-প্রেত নেই। নির্বাচনের জন্য এটা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। সব ধরনের বিচার বিশ্লেষণ করে ইভিএমের বিরুদ্ধে কিছুই পাওয়া যায়নি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি নিজেই এর দায়ভার নিব। ভোটাররা নির্দ্বিধায় ভোট প্রদান করতে পারবেন। তাই আপনারা সময়মতো ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবেন। কোনো বিলম্ব করবেন না।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে অনেকেই অনেক কথাই বলেন। এটার কিন্তু পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর ভেতরে জিন-ভূত-প্রেত থাকে বলেও অনেকে বলেছেন। কিন্তু আমরা এ রকম কোনো কিছু পাইনি।
আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ এলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। আপনারা (প্রার্থীরা) এমন কিছু করবেন না যাতে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
সিসিক নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাব হোসেন খানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হুমকি ও অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা ঢাকায় গিয়ে বিষয়টি দেখব।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ শরিফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেটের বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের।
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ অন্য মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সিইসি। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন উপলক্ষে আজ দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি। এ ছাড়া আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন সিটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজ রাত ৮টা ২০ মিনিটে বিমানে করে ঢাকার উদ্দেশে তার সিলেট ত্যাগের কথা রয়েছে। সিসিক নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে মোট ৮ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপফুল)। আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), মো. শাহজাহান মিয়া (বাস গাড়ি) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।
আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। সিসিকে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২ ও সংরক্ষিত ১৪টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটর রয়েছেন ৬ জন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো সিলেটের সব ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
মন্তব্য করুন