সোমালিয়ায় জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি ২৩ নাবিক জাহাজেই ঈদ উদযাপন করেছেন। দস্যুদের অনুমতি নিয়ে সেমাইও রান্না করে খেয়েছেন জিম্মি নাবিকরা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় তারা জাহাজের ডেকে নামাজ আদায় করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ বর্তমানে সোমালীয় জলসীমায় অবস্থান করছে। সোমালিয়াসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য এদিন নাবিকদের জাহাজের ডেকে যাওয়ার সুযোগ দেয় দস্যুরা। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে নাবিকদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানা গেছে।
জাহাজে ওয়েলার পদে কর্মরত শামসুদ্দিনের ভগ্নীপতি বদরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তার শ্যালক বুধবার সন্ধ্যায় ইফতারের সময় ফোন করেছেন। এ সময় তিনি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। ওয়েলার শামসুদ্দিন তখন স্বজনদের ভালো আছেন বলে জানান। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে দস্যুদের অনুমতি নিয়ে সব নাবিক একসঙ্গে জাহাজের ডেকে ঈদের নামাজ পড়েছেন ও সেমাই রান্না করে খেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও নাবিকদের উদ্ধারে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, তবে মুক্তির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
বুধবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের দেওয়ানজি পুকুর লেন ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাবিকদের পরিবারকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, তাদের উদ্ধারে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে সরকার। প্রথমত, যারা অপহরণ করেছে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত, জলদস্যুদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রচুর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। নাবিকরা ভালো আছেন, নিয়মিত তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, এমনকি ভিডিও কলেও কথা বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল- সেটি এখন নেই। আমরা আশা করছি, তাদের শিগগিরই মুক্ত করতে পারব।
জানা গেছে, মুক্তিপণ আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়েই জলদস্যুরা গত ২৭ মার্চ থেকে নাবিকদের কেবিনে থাকার পাশাপাশি জাহাজে কাজ করার সুযোগও দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সে সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এটি একটি বাল্ক ক্যারিয়ার। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার।
মন্তব্য করুন