শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৫ লাখ টাকার সেই ছাগলটি এখন কোথায়?

অভিযানের সময় আলোচিত সেই ছাগল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা
অভিযানের সময় আলোচিত সেই ছাগল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা

ছাগলকাণ্ডে সমালোচিত সাদেক এগ্রোতে দিনভর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিং ও নবীনগর হাউজিংয়ে অবস্থিত দেশজুড়ে আলোচিত এই এগ্রোর দুই স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে নবীনগর হাউজিং ৭ নম্বর রোডের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে গড়ে তোলা সাদেক এগ্রোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে মালামাল নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় ছাগলকাণ্ডের আলোচিত ১৭৫ কেজি ওজন, ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগলটিসহ অন্যান্য গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়া হয়।

এই ‘উচ্চবংশীয়’ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন এনবিআরের সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। সেই ছাগলের রশি ধরে টান দিলেই উঠে আসে ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের নাম। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর তিনি হারিয়েছেন এনবিআরের পদ। তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার খাল দখল করে গড়ে তোলা সাদিক এগ্রোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে নামে সিটি করপোরেশন। তবে এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে ছাগলকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সাদেক এগ্রোয় পৌঁছায়। সেসময় সাদেক এগ্রোর জমির মালিক আব্দুল আলীমের ভাগ্নে মো. ইউসুফ জমির দলিল নিয়ে উপস্থিত হন। তারা উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব থাকা ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাববীর আহমেদকে দলিল দেখান। এ নিয়ে কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হয়। এর পরপরই অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানের শুরুতেই খালের অংশে দখলে থাকা অস্থায়ী স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সাদেক এগ্রো ছাড়াও বেশ কিছু অস্থায়ী স্থাপনা এখানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলো উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। মূলত খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল সাদেক এগ্রোর খামার। পাশাপাশি সড়কের জায়গাও দখল করে তারা।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কাগজপত্র দেখে যেটা বুঝেছি তা হলো– এখানে এক বিঘার মতো জায়গা খালের ওপর। উনি (ইউসুফ) বলতে চাচ্ছিলেন মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু আমাদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার আছে, সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আছেন। আমরা দেখেছি তারা ভুল বলছে। সেই হিসেবেই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। উনি (ইউসুফ) বলতে চাচ্ছিলেন, আমরা নোটিশ দেইনি। আমরা গত মাসের ১৮ তারিখ তাকে নোটিশ দিয়েছি। তারা কোনো উত্তর দেননি।

ঈদের আগেই এই অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমরা আগেই এই অভিযান পরিচালনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঈদ বলে করিনি। কারণ এর ভোক্তা পর্যায়ে একটি প্রভাব আছে। এখন আমরা তাই এই অভিযান চালাচ্ছি।

এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে ছাগলকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে মোতাকাববীর বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নই। যাদের স্থাপনা খালের মধ্যে এসেছে আমরা তাদের উচ্ছেদে কার্যক্রম চালাচ্ছি। খাল উদ্ধার সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক কাজ। এর আগেও আমরা বসিলার দিকে খালের অংশে বাসস্ট্যান্ড সরিয়েছি। আমরা ধারাবাহিকভাবে খালগুলো উদ্ধার করার কাজ করে যাচ্ছি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে জব্দ করা মালামাল উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। নিলামে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা সকল মালামাল কিনে নিয়েছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিলামে কেনা মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

আগামী তিন দিন অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন অভিযান চালাবে বলেও জানান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সাদেক এগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি এই জমির মালিক না, একজন ভাড়াটিয়া। তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অন্য জায়গায় চলে যাব। সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানাই এবং তা অবশ্যই হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যে জায়গাটা খাল বলে দাবি করছে, সেটির মালিক আমি না। এই জায়গায় মালিক এই স্থাপনার দ্বিতীয়তলায় থাকেন। তিনি তার জায়গায় স্থাপনা করেছেন, আমি নিচতলা ভাড়া নিয়েছি। মালিক নিজেই দ্বিতীয়তলায় থাকেন। খাল ভরাটসহ যা কিছু বলা হচ্ছে সবই মালিকের করা। আমার কিছুই না। আমি তার জায়গা ভাড়া নিয়েছি নিচ তলায়। দ্বিতীয় তলায় যেহেতু তিনি থাকেন এবং সিটি করপোরেশন যদি মনে করে যে এটা ভেঙে দেবেন, তো ভেঙে দিতে পারে।’

সাদেক এগ্রোর মালিক বলেন, ‘আমি যে ভাড়া নিয়েছি এটার ডিড (চুক্তি) আমার কাছে আছে। তাই আমি এটার মালিক... বললেই হবে না। আমি খালসহ ভাড়া নেইনি। উনি স্থাপনা বানিয়েছে, সেই নিচতলায় আমি ভাড়া নিয়েছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১০

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১১

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

১২

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

১৩

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১৪

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১৬

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৭

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৮

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৯

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

২০
X