এমরান সালেহ প্রিন্স
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৬ পিএম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
এমরান সালেহ প্রিন্স

কঠোর কর্মসূচি ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই

বিএনপির সমাবেশ। পুরোনো ছবি।
বিএনপির সমাবেশ। পুরোনো ছবি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর পূর্ব ঘোষিত ও পূর্বনির্ধারিত মহাসমাবেশ করতে দেওয়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা এবং টালবাহানা করা সরকারের অসাংবিধানিক ও গণবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এই সরকার সভা-সমাবেশ করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। অনেক দিন আগেই আমরা মহাসমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছি। সরকার ও প্রশাসনের কাছে সেটি অবহিত করেছি। তারপরও প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা করছে সরকারের নির্দেশে। সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, যা সংঘাত সৃষ্টির নামান্তর। একই সঙ্গে তারা আমাদের কর্মসূচির দিন সরকারি দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। বর্তমান সরকার যে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার, তারা যে গণবিরোধী সরকার, তারা যে সংবিধান মানে না- সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক অধিকার তারা যে কেড়ে নিয়েছে এর থেকে বড় প্রমাণ আর কিছুই হতে পারে না। আগামীকাল ইনশাআল্লাহ নয়াপল্টনে আমাদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

মহাসমাবেশের প্রস্তুতি

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণ বিএনপির চলমান একদফার আন্দোলনে ব্যাপকভাবে শামিল হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণ আমাদের আন্দোলনে শামিল হয়েছে। এ জন্য সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিলেই তারা স্বউদ্যোগে, সর্বাত্মকভাবে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বর্তঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশসহ আমাদের সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। অতীতে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে যোগ দিয়েছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে। ফলে মহাসমাবেশ করতে আমাদের বাড়তি কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হচ্ছে না, প্রয়োজনও পড়ে না। তারপরও আমরা আমাদের বিভাগীয়, মহানগর, জেলা, থানা পর্যায়ে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছি। আমরা কর্মিসভা করেছি। আমরা যথাযথভাবে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছি। সরকার আমাদের প্রস্তুতি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। সাধারণ জনগণকে হয়রানি করছে। সমাবেশের দুদিন আগেই পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। এত হয়রানি-নির্যাতন উপেক্ষা করে জনগণ আমাদের মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য ঢাকায় এসেছে এবং আসছেন। দমন-নিপীড়ন চালিয়ে জনতার স্রোত সরকার রোধ করতে পারবে না।

সরকারের দমন-নিপীড়ন

সরকারের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। এর আগে সরকারই বলেছে, বিরোধী দল সভা-সমাবেশ করুক, তাদের কোনো আপত্তি নেই। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে তারা সহযোগিতা করবে। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও একই কথা বলেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, তারা গ্রেপ্তার করছে, নির্যাতন ও দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, হয়রানি করছে, পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে, রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার সব প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যবহার করছে বিএনপির মহাসভাবেশ ব্যর্থ করার জন্য। এসব কার্যক্রম সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এই সরকারের অধীনে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। যে সরকার সমাবেশের মতো একটি নিরীহ কর্মসূচিতে বাধা দেয়, স্বর্তঃস্ফূর্তভাবে করতে দেয় না, সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন তো প্রশ্নই উঠে না।

গত ১৫ বছর যাবৎ সরকার বিএনপির ওপর নানাভাবে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমাদের একেকজন নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা করেছে এই সরকার। হাজার হাজার মামলা করেও বিএনপির নেতাকর্মীদের দমাতে পারছে না সরকার। সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এরই সরকার। মিথ্যা মামলা দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি সেগুলোকে সাজানোভাবে বিচারের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। একতরফাভাবে রায় দিয়ে আমাদের নেতাদের নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। তারা বিএনপিকে ভয় পায়। নির্বাচনের মাঠে তারা বিএনপিকে মোকাবিলা করতে পারবে না বলে দমন-নিপীড়নের পথ তাড়া বেছে নিয়েছে। সেই কারণে আমরা বলছি, এই সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে একমাত্র বাধা হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র গ্যারান্টি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

মহাসমাবেশ থেকে প্রত্যাশা

আমরা সরকারকে বলেছিলাম, দেশের অর্থনীতি-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। মানুষের আয় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের একজন নারী একটি মুরগির ডিম তার দুই সন্তানকে ভাগাভাগি করে খাওয়াচ্ছেন। এমন একটি দুঃসহ খারাপ অর্থনীতির সময়ে কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন তীব্র করে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে মানুষের আরও ভোগান্তি বাড়ুক সেটি আমরা চাচ্ছিলাম না। সেজন্য সরকারকে আমরা বলেছিলাম, ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সরকার আমাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। সেই কারণেই আমরা আগামীকালের মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। জনগণের পীঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদের আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। আগামীকাল আমাদের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের যে মহাযাত্রা শুরু হবে সেটি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থামবে না।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স : বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের ভাতার জন্য আবেদন শুরু

এপোস্টল কনভেনশন স্বাক্ষর অনুমোদন / বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা 

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে রাইসি যা বলেছিলেন

জনগণ আর ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে দেবে না : বিপিপি

‘ইব্রাহিম রাইসি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন’

স্নাতক পাসে অফিসার পদে চাকরি দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

বিআরটিসির ২৯৮তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

বিএনপির ৩ নেতাকে শোকজ

রাইসির আত্মার মাগফিরাত কামনায় সৌদি বাদশাহ

দৈনিক কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর শারমিনের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

১০

শক্তিশালী ব্যালেন্স শিট প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের

১১

১৫৭ উপজেলায় কাল ভোট, ইভিএমে ২৪টি

১২

বজ্রপাতে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

১৩

অটোরিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

১৪

চাঁদার ৫০ টাকা না পেয়ে হত্যা, ৮ বছর পর যাবজ্জীবন

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যমুনা ইলেকট্রনিক্সের শোরুম উদ্বোধন

১৬

নির্বাচনের পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সরকার : ফখরুল

১৭

ইরানের সরকার আসলে কীভাবে পরিচালিত হয়?

১৮

আরও ২২ জন করোনা শনাক্ত

১৯

ঢাকায় ম্যানেজার পদে চাকরি দেবে বিকাশ

২০
X