কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্সের লাগাম টানতে আরও একটি প্রচেষ্টা

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দৈনিক কালবেলায় ৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘কাঠামো পাচ্ছে পাবলিক ভার্সিটির সান্ধ্য কোর্স’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে খেয়ালখুশি মতো সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করছে। এ নিয়ে বিগত সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমালোচনাও করেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাবেক আচার্য (সাবেক রাষ্ট্রপতি) মোঃ আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) সান্ধ্য কোর্স বন্ধে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তাই এবার সান্ধ্য কোর্সকে একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে ইউজিসি। এ লক্ষ্যে কোর্স পরিচালনায় গাইডলাইন প্রস্তুতের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে হেলাল হোসাইন নামের এক পাঠক লেখেন, এই কোর্সগুলোর দরকার আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্বল অবকাঠামো ও মানসম্মত শিক্ষক ছাড়াই কোর্সগুলো করানো হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করালে কম খরচে ভালো শিক্ষা অর্জিত হবে।

এস এম মোজাম্মেল হক আল মামুন নামের আরেক পাঠক লেখেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অত্যন্ত নাজুক অবস্থা বিরাজমান। বলা চলে যুবকদের বেকার তৈরি করার কারখানা। বিশ্বের ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। যেখানে পাকিস্তানের মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়। শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত এশিয়ার সেরা ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও স্থান প্রকাশ করা হয়েছে। লজ্জাজনক হলেও সত্য সেখানেও আমার সোনার বাংলার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এশিয়ার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। বর্তমনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গবেষণায় চরম অদক্ষতায় নিমজ্জিত বাংলাদেশ। আর এসব থেকে উত্তরণের উপায় দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। সমাধানের জন্য সর্বাত্তক চেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) সান্ধ্যকালীন কোর্সের যে উদ্যোগ নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা যথা সম্ভব বাস্তবায়ন করবে। এতে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য ও উইকেন্ড কোর্স পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন। এর বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরও দুজন শিক্ষককে কমিটিতে কো-অপ্ট সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রথম বৈঠক করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবির ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে, জাবির ১৬টি, জবির ১৯টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে, রাবির ১৬টি বিভাগ ও ৩টি ইনস্টিটিউটে এবং চবির ৬টি বিভাগে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। বেশিরভাগ সান্ধ্য কোর্সে এক বা দুই বছরে ডিগ্রি দেয়। এগুলোতে সাধারণ কোর্সের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ঢাবির সমাবর্তনে যতবার এসেছেন ততবারই সান্ধ্য কোর্স নিয়ে সমালোচনা করে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তার মতে, ডিপ্লোমা ও সান্ধ্য কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দিচ্ছে। সান্ধ্য কোর্সের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সন্ধ্যার পরে মেলায় পরিণত হয়। দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে ‘সরকারি’ আর রাতে ‘বেসরকারি’ চরিত্র ধারণ করেছে। কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে উদাসীন থাকলেও সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। কেননা এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।

২০১৯ সালে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সান্ধ্য কোর্স বন্ধে একটি নির্দেশনা দেয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এসব নির্দেশনা সংবলিত চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে ইউজিসি। চিঠিতে বলা হয়েছিল, সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হওয়া দরকার।

২০২২ সালে ইউজিসির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্য, উইকেন্ড ও এক্সিকিউটিভ কোর্স পরিচালিত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের কোর্স পরিচালনা করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীর স্বার্থের পরিপন্থি। এসব কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ইউসিসির পূর্বানুমোদনক্রমে দক্ষ জনবল তৈরিতে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং গ্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য সচিব মৌলি আজাদ কালবেলাকে বলেন, সর্বজনীন নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে সান্ধ্য কোর্স চালাচ্ছে। এজন্য ইউজিসি কমিটি গঠন করেছে। আমরা এরই মধ্যে একটি সভা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করছে, তা জেনে আমরা একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করব।

কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন বলেন, কমিটি একটি প্রাথমিক সভা করেছে। আরও দুটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ চবি ও রাবিকে নিয়ে আমরা পরবর্তী সভা করব। এরপর গাইডলাইন তৈরি হবে। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নেব। সবদিক বিবেচনা করে এমনভাবে গাইডলাইন করা হবে, যাতে সবাই সেটা মানে।

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, যে নীতিমালাই হোক না কেন, সেখানে অংশগ্রহণ বাড়লে বাস্তবায়ন সহজ হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই নীতিমালা করা হবে। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা যাবে না।

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, সান্ধ্য কোর্সকে আমরা একটি কাঠামোর (ফ্রেমওয়ার্ক) মধ্যে নিয়ে আসব। এ ধরনের কোর্স যদি বিশ্বের অন্য দেশে থাকে, তাহলে আমাদের দেশেও সেটা থাকতে পারে। তবে সেটি অবশ্যই নীতিমালার মধ্যে থাকতে হবে। সময় নিয়ে সবদিক বিবেচনা করে নীতিমালা করতে হবে। আমরা যদি দেখি, এসব কোর্স রাষ্ট্রের দক্ষ মানবসম্পদ বাড়াতে অবদান রাখছে, তাহলে সেটা উৎসাহিত করতে চাই। নীতিমালা তৈরি হলে আমরা তা পূর্ণ কমিশনে পাস করাব। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের মতামত থাকবে।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অলিম্পিকে পদকের লড়াই হবে যে ইভেন্টগুলোতে (২৭ জুলাই)

দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে নতুন ছক সৌদির

রাশিয়ার সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার

ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

মানামার বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, ঢাকার পরিস্থিতি কী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল যে দেশগুলো

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

উদ্বোধনীতে অ্যাথলেটদের চেয়ে বেশি উৎফুল্ল বাংলাদেশের কর্তারা

১০

কুষ্টিয়ায় নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার

১১

৬ দিন পর বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

১২

ভেজানো ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

১৩

হামলা মামলা ও লাঞ্ছনার শিকার লালমনিরহাটের ৬ সাংবাদিক

১৪

কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র, লজ্জায় আত্মহত্যা

১৫

প্যারিসের আলোয় উদ্ভাসিত অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

১৬

ট্রলার উদ্ধারে গিয়ে ডুবল স্পিডবোট, সৈকতে ভেসে এল ২ মরদেহ

১৭

সিলেটে ‘অবৈধ’ নিয়োগে প্রভাষক জালিয়াতিতে অধ্যক্ষ!

১৮

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী শনিবার

১৯

ইতিহাসে এই দিনে কী ঘটেছিল?

২০
X