কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংবিধান পরিপন্থি : জি এম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পুরোনো ছবি
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পুরোনো ছবি

চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক আন্দোলন উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, সব সমাজের মানুষই বৈষম্য পছন্দ করে না। বৈষম্যময় সমাজকে সুষ্ঠু সমাজ বলা যায় না। বাঙালিরা ব্রিটিশ আমল থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। বৈষম্য থেকে বাঁচতেই তারা পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হয়েছিল। পরে পাকিস্তানিরাও বাঙালিদের সঙ্গে বৈষ্যম্য সৃষ্টি করেছিল। তাই প্রথমে শুরু হলো স্বাধীকার আন্দোলন এবং পবরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম শুধু বৈষম্য থেকেই বাঁচতে। স্বপ্ন ছিল আমাদের একটি দেশ হবে, আমাদের দেশ হবে বৈষম্যহীন। যেখানে নির্যাতন- নিপিড়ন থাকবে না। সংবিধানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে সংবিধান পরিপন্থি।

তিনি বলেন, বৈষম্য সৃষ্টি করতেই বাংলাকে পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রভাষা করতে চায়নি। ভাষার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তারা। উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিরা যেন সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকে। এই বৈষম্যের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ’৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের ভাইয়েরা। বৈষম্যহীন এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গড়তেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল। এমন অবস্থায় চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করে।

সংবিধানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সংবিধানে সাম্যের কারণে কিছু মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়ার কথা আছে। যারা পিছিয়ে আছে, তারা যেন এগিয়ে যেতে পারে। পিছিয়ে পড়াদের কতটুকু সহায়তা দেওয়া হবে তাও সংবিধানে বলা আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা তাদের উত্তরাধিকারদের কোটা পদ্ধতিতে সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করা হয়েছিল, এখন তা ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি করা হয়েছে। এটা নিয়ে বহু কন্ট্রোভার্সি আছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কত বয়স ছিল ২ থেকে ৩ বছর আবার কারো জন্মই হয়নি তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। অনেকের মুক্তিযুদ্ধের অবদান নিয়ে সন্দেহ আছে। আবার অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু তারা বিভিন্ন কারণে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে অনেকেই জীবন দিয়েছেন, তাদের সন্তানরাও জীবন দিয়েছেন কিন্তু শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের এককালীন সুবিধা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তা অন্য কাউকে বঞ্চিত করে বা বৈষম্যের শিকার করে নয়। যেখানে একজন চাকরি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত তাকে বঞ্চিত করে অন্য কাউকে চাকরি দেওয়াটা স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি।

জি এম কাদের বলেন, ব্রিটিশরা ডিভাইড অ্যান্ড রুল করে আমাদের নির্যাতন করেছে। ব্রিটিশদের হয়ে আমাদের দেশের সৈন্যরা এবং প্রশাসকরাই আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে। আমাদের দেশের রাজা-মহারাজারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে ব্রিটিশদের হয়ে। এখন একটি শাসক শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা সুবিধাবাদি গোষ্ঠী তৈরি করতেই অনুপযুক্তদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। অনুপযুক্তদের বিত্তশালী করা হচ্ছে। তারা যেন সরকারের প্রতি অনুগত থাকে। কারণ, অনুপযুক্তরা জানে এই চাকরি বা সম্মানের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সরকারের অনুগত হয়ে থাকবে। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবহার করে কোটা পদ্ধতি চালু রাখতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য শক্তিশালী একটি অনুগত বাহিনী সৃষ্টির জন্য। সারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে শাসক গোষ্ঠী লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করতে চায়। তাই কোটাবিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক।

তিনি আরও বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। তবে ফিলোসফিটি আমি বলেছি। সাধারণ মানুষের ধারণা লাঠিয়াল বাহিনী সৃষ্টি করতেই অনুপযুক্ত লোকদের শক্তিশালী করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মতো অত্যাচার চালানোর অপচেষ্টা চলছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মতোই বর্তমান সরকার ডিভাইড অ্যান্ড রুল চালু করেছে। কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে কারো অধিকার বঞ্চিত করা অন্যায়। যে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে তাকে বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই। যে বঞ্চিত হবে তার মা-বাবাও বঞ্চিত হলো। তাদের উত্তরাধিকারও বঞ্চিত হবে এই পদ্ধতিতে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবেন সাংবাদিক সম্পদ

দুর্নীতিবাজদের বর্জন করুন, জনগণের ভরসা হতে চাই : শাকিল উজ্জামান

তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাকরিচ্যুত

টাকা বাঁচাতে লেভানদোভস্কিকে গোল করতে মানা করেছিল বার্সা!

মুক্তিযুদ্ধকে বিএনপির মতো অন্য কোনো দল ধারণ করে না: শামা ওবায়েদ

মুশফিকের শততম টেস্টে হামজার বিশেষ বার্তা

ভারতকে হারিয়ে ফিফা থেকে সুখবর পেল বাংলাদেশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের কবলে বিচারক, খোয়ালেন মোবাইল-চশমা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছোট কাজে বড় অনিয়ম

লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল / ১০ বছরের করমুক্ত সুবিধা পাবে দুই বিদেশি কোম্পানি

১০

রামপুরায় বাসে আগুন

১১

যুবদলের পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

১২

আসামি ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা, যুবক গ্রেপ্তার

১৩

এবার ‘রাজসাক্ষী’ হয়ে আরেক পুলিশ সদস্যের জবানবন্দি

১৪

দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ আ.লীগের ৮ নেতাকর্মী কারাগারে

১৫

নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাবিতে নৌবহর কর্মসূচি

১৬

সময় টিভির চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলামের পদত্যাগ

১৭

ইতালি নেওয়ার লোভ দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে তিন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা

১৮

জানা গেল বিপিএল নিলামের নতুন তারিখ

১৯

রোজা শুরু হতে আর কত দিন বাকি? জেনে নিন

২০
X