বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুর্বিনীত দুঃশাসনের যাঁতাকলে ‘নির্বাচিত সরকার’ কথাটি জনগণকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশ এমনকি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জানাজার অধিকারটুকুও হরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তারা সংবিধানের বাইরে যাবেন না। তা যাবে কেন? শেখ হাসিনা আপনাদের একেবারে আওয়ামী চেতনার সালফিউরিক এসিডের মধ্যে চুবিয়ে তুলে নিয়ে এসেছেন। আপনাদের দেহ-মন সব যে আওয়ামী চেতনায় জারিত সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রধানমন্ত্রীর কথা, আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনারদের কোনো ধরনের বৈপরীত্য হবে... এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনেরই পাঁয়তারা করছে। যেটি ওই আলমগীর সাহেব যে কথাটি বলেছেন, ‘সংবিধানের বাইরে যাবে না’ এই কথাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, তারা শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, তার এজেন্ডা অনুযায়ী সেই ২০১৮’র মতো নিশিরাতের ভোট বা ভোর রাতের ভোট বা সন্ধ্যা রাতে ভোট এই রকম কোনো একটা হাসিনা মার্কা ভোট করার দায়িত্ব পালন করবেন এই নির্বাচন কমিশন।
রিজভী বলেন, এই নির্বাচন কমিশন এমনই বিশ্বস্ত সেবাদাস যে, তারা স্বায়ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও স্বায়ত্বশাসনে নিজেদের ক্ষমতা নিজেরাই হ্রাস করার জন্য সুপারিশ করেছেন এবং সেই ক্ষমতাটি শেখ হাসিনার পদতলে অর্পণ করেছেন। অর্থাৎ তারা সুপারিশ করে পাঠিয়েছেন সেটা অবৈধ পার্লামেন্ট পাস করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংবিধানের কথা বলেন শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। আসলে তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে বেআইনি কার্যকলাপের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের মনে আছে, ক’দিন আগে বেআইনিভাবে অজ্ঞাত দুটি রাজনৈতিক দলকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে যাদের কোনো কার্যালয় নেই, দেশজুড়ে তাদের কোনো সংগঠন নেই। এ ধরনের দুটি দলকে তারা নিবন্ধন দিয়েছেন, নাম-গোত্রহীন দুটি দল দিয়েছেন। এটা দিয়েছেন সরকারের নির্দেশেই।
নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, আপনাদের সংবিধান যে কোথা থেকে নাজিল হয় তা জনগণ জানে। আওয়ামী চেতনায় জারিত কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করে নিশিরাতের সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সুতরাং সরকারের গানের সুরেই যে তাল দিবে নির্বাচন কমিশন এটাই স্বাভাবিক।
কারাগারে মৃত্যু প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, জেলহাজতে বিএনপিসহ বিরোধীদলের বেশকিছু নেতাকর্মী নিপীড়ন-নির্যাতন এবং বিনা চিকিৎসায় ধুকতে ধুকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। দেশের কারাগুলো শেখ হাসিনার কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অথচ এই সরকারের আমলে কারাগারে সবচেয়ে বেশি বিরোধীদলের নেতাকর্মী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। আজ দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিণী যিনি বিপন্ন গণতন্ত্রকে এক অকুতোভয় নেতৃত্বে বারবার পুনরুদ্ধার করেছেন, দেশের আইনের শাসন, সুবিচার এবং মৌলিক মানবাধিকারের প্রতীক গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। যা অন্যায়, অবৈধ ও কুৎসিত প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। বন্দি অবস্থায় করা হচ্ছে অমানবিক নিপীড়ন। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সরকার দস্যুদলের মতো বন্য আক্রোশের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্যারোলের অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও মায়ের লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুকে। প্যারোলে মুক্তির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও জেলগেটে গাড়িতে উঠানোর সময় তাকে কারাগারে আবার ফেরত পাঠানো হয়। উপরের নির্দেশেই নাকি তাকে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। আমি এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, আসাদুল করিম শাহিন ও আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন