ইউরোপ-আমেরিকার মেহমান না বলে চলে আসেন এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ইউরোপ-আমেরিকার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপের নেতাদের আমরা তো দাওয়াত করি না। কোথা থেকে এত মেহমান আসেন। ইউরোপ-আমেরিকার মেহমান না বলে চলে আসেন। আসতে চান আমাদের বলেন, আমরা আদর-যত্ন করে রাখব। কী জানতে চান বলেন, প্রয়োজনে আমাদের জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। আপনারা কথা বলেন, ধমক মারেন, নিষেধাজ্ঞা দেন, এখন আবার ভিসা নীতি দেন। কিন্তু এই হুমকি বিএনপির ব্যাপারে কেন বলেন না? আপনাদের তো মূল কথা নির্বাচনে যে বাধা দেবে, তার বিরুদ্ধে ভিসা নীতি। এই কাজ তো বিএনপি করছে। আমরা তো করছি না। আমরা তো নির্বাচন চাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নির্বাচনের আগে-পরে শান্তি চাই। যারা নির্বাচনের নামে আগুনসন্ত্রাসের পরিকল্পনা করবে, আমরাও দেখব এই নিষেধাজ্ঞার মানে কী, এই ভিসা নীতি কার বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের স্মরণে’ শীর্ষক ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপি সেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদি তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। তাদের প্রতিদিন শুধু এক কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দেশে তত্ত্বাবধায়ক আর কখনো ফিরবে না। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় আর সন্ত্রাসী দল বিএনপি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কাজেই নিষেধাজ্ঞা আর ভিসা নীতি কার ওপর প্রয়োগ হয় তাই দেখা হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, আপনারা তারেক রহমানকে বলেন সাহস থাকলে দেশে আসতে। রাজপথে ফয়সালা হোক। কানাডার আদালত বিএনপিকে পাঁচবার সন্ত্রাসী বলেছে। বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিদেশেও চিহ্নিত। এই টেরোরিস্টের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ। আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। তারা এখন বলে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র। ফ্যাসিবাদী কাকে বলে? এটার পুরো চরিত্রই বিএনপির ক্ষমতার আমলকে পুরো ফুটিয়ে তোলে। ফ্যাসিবাদের জ্বলন্ত প্রমাণ বিএনপি। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তারা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
বিএনপি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের মুখে দুর্নীতির কথা শোভা পায় না কারণ তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে তারাই এখন গণতন্ত্রের কথা বলছে। ফখরুল সাহেব, দুনিয়ার কোথাও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে পাকিস্তানে যান, বলেন তিনি।
১৫ আগস্টের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বড় দোষ সত্য কথা বলা। ১৫ আগস্টের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সত্য কথা, বড় বড় সত্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। আমরা অনেকে ভয় করি, নেত্রী কেন এসব বলেন? বিশ্ব মোড়লদের খেপাচ্ছেন। কিন্তু নেত্রীর কাছে সব খবর আছে। এখানে একটা বড় খেলা আছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, জাতি রাষ্ট্রের নির্ভেজাল স্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পলাশীর ময়দানে যেমন সিরাজ খুব কাছের সেনাপতিদের জন্য পরাজিত হয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুও ১৫ আগস্ট নিজের কাছের মানুষ দ্বারাই শহীদ হয়েছিলেন। মোহনলাল যেমন সিরাজের পক্ষে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলেন ঠিক তেমনই কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে এসে শহীদ হয়েছিলেন। পলাশীর ইয়ার লতিফের সঙ্গে ’৭৫ সালের জিয়ার পূর্ণ মিল রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নজির নেই যেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা টার্গেট হয়েছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও কিছুটা দেরিতে হলেও আজ বাংলাদেশের পথচলা স্বাভাবিক হয়েছে। অল্প দিনেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে যা সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
মন্তব্য করুন