মানবিক করিডোর নিয়ে সরকার জাতিকে অন্ধকারে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমদ।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির উদ্যোগে মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চ স্মরণে গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমদ বলেছেন, কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবিক করিডোরের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ১৮ কোটি লোকের দেশ। জনগণ ও কোনো রাজনৈতিক দল জানে না। জনপ্রতিনিধিরা জানে না। তাহলে কী মানবিক করিডোর হবে? করিডোরের লক্ষ্য কী? আমরা কী নতুন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? এ সম্পর্কে তো সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করা। কিন্তু দেখি যে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক কথা বলেন, আবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরেক কথা বলেন। কেউ বলেন যে, চুক্তি হয়েছে; আরেক উপদেষ্টা বলেছেন যে, করিডোরের বিষয়টি নিয়ে এখনো তারা কোনো মতামত দেননি। ফলে জনগণ অন্ধকারে আছে। এটা কী ধরনের সরকার? গণতন্ত্রের জন্যই তো ১৬ বছর সংগ্রামের পর এই মাফিয়া সরকারকে বিদায় করেছি। এখনো কেন আমরা অন্ধকারে থাকব?
হাফিজ উদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের অনেক সময় এমন এমন রাজনৈতিক দল আসে যারা দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মাফিয়া শেখ হাসিনার সরকার তারা বলেই দিয়েছে যে, চীনের এ প্রকল্প ভালো না, আমরা ভারতের প্রকল্পই বাস্তবায়ন করব। কতখানি নতজানু এই দেশ যে, তারা দেশের মানুষকে মানুষই মনে করে না। ইচ্ছামতো তারা তাদের পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধি করে। তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের যে চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা সেটিকে পদদলিত করে নানা ধরনের অসম চুক্তিতে বাংলাদেশকে নিমজ্জিত করেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। কোনো ধরনের আগ্রাসনের সঙ্গে জড়িত হবো না। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তিই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য অ্যামেচার সরকার বাদ দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার।
তিনি বলেন, তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা করি যে, আমরা যাতে জনগণের দাবি-দাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানেই দুর্বল সরকার। যে কারণে আমরা এখন পর্যন্ত তাদের কাছে যেমন পদক্ষেপ দেখার কথা সেটি দেখছি না। তবে বিশ্বাস করি আগামী দিনে পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
হাফিজ উদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে সামরিক শক্তির প্রয়োজন আছে। অনেক দেশ আছে যাদের সামরিক শক্তি কম। কিন্তু তারা জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে কিংবা তাদের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এই জনগোষ্ঠীকে একটি শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। সম্প্রতি অল্প ক্ষতিতেই পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি আমরাই জানি না- কীসের জন্যে এই করিডোর? কী হবে? আমরা কী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? তবে আমাদের শক্তি অর্জন করতে হবে। আমাদের এত বড় সেনাবাহিনী কী জন্যে আছে? তাদের প্রকৃত প্রশিক্ষণ আছে কি না? আমরা কী খালি খাল আর নদী উদ্ধার করব? ত্রাণ বিতরণ করব? না আমাদের মূল কাজ জনগণকে শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখব। সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
গোলটেবিল বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ টিপু সুলতান ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির প্রমুখ।
এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিল্লির কাছে এমনভাবে আত্মনিবেদন করেছিলেন যে, সেখান থেকে তিনি ফিরতে চাননি। তিনি সেটা করলেন এবং তার প্রভাব শুরু হয়েছে। এর যে বর্জ্য নদীতে পড়ছে, দিনকে দিন নদীগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমরা ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি। একটা স্টাইল হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে সে বোধহয় পশ্চাৎপদ, সে বোধহয় আধুনিক নয়, সে প্রগতিশীল থাকবে না- এ রকম প্রবণতা, খুব পরিকল্পিতভাবে এমন মাইন্ডসেট চালানো হয়েছে। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। এ দেশে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছে বামপন্থিরা। কিন্তু এখন সেভাবে তারা সোচ্চার না।
মন্তব্য করুন