কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন : তারেক রহমান

তারেক রহমান। পুরোনো ছবি
তারেক রহমান। পুরোনো ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না। লোভ-লাভের প্রলোভন থেকে মুক্ত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, আগামী দিনে আর কোনো স্বৈরাচার, আর কোনো ফ্যাসিবাদ যেন দেশ ও জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেজন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া, পদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। যদিও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তি ও সার্মথ্য নিয়ে ইতোমধ্যে জনমনে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তবুও গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার সেই আহ্বানে সেভাবে সাড়া দেয়নি। বরং সরকার জাতীয় নির্বাচন সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ সুকৌশলে অল্প ও বেশি সংস্কার এই ধরনের অভিনব বেড়াজালে আটকে দিয়েছে। সরকারের চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় জনমনে অস্থিতিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে জড়ো হচ্ছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকার ভেতরে ও বাইরেও এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অস্থিরতা বাড়তে থাকলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সক্ষমতা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দলগুলো এখনো সরকারের সক্ষমতা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেনি। তবে আমরা চুপ থাকলেও জনগণ এরই মধ্যে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে সরকার গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অথচ জুলাই আগস্টে কতজন শহীদ হয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন তা গত ১০ মাসেও সরকার শহীদ ও আহতের সংখ্যা ও তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি। একজন শিক্ষার্থী বা গবেষক যদি জুলাই আগস্টের সঠিক সংখ্যা জানতে চায়, তারা একটি সঠিক তথ্য পাবেন কিনা তা নিয়ে বিরাট সন্দেহ রয়েছে গেছে।

তারেক রহমান বলেন, সরকার কি হতাহতের ব্যাপারে উদাসীন, নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? দেশের বহু মানুষের জিজ্ঞাসা। জুলাই হতাহতদের তালিকার চেয়ে করিডোর দেওয়া বা বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, করিডোর বা বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এই সরকারের আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন নেই তবে তারা কখনোই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার নয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করায় হিতেবিপরীত হয়েছে। নিয়মিত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। সরকার ব্যাপক আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলন করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসেনি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

তারেক রহমান বলেন, সরকার কোনো এলিট ক্লাব বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার অবশ্যই একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। যদি গণতান্ত্রিক শক্তিকে উপেক্ষা করে বিরাজনীতিকরণ উৎসাহিত করলে ব্যক্তি বিশেষ লাভবান হতে পারেন কিন্তু জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি।

এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, এনডিএম কোনো ড্রয়িংরুমে জন্মগ্রহণ করেনি, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছি। ঘাম, সংগ্রাম ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে। জনসেবা করাই আমাদের লক্ষ্য। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনেও রাজপথে থেকে ভূমিকা রেখেছে নেতা-কর্মীরা। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার আর কখনো বাংলাদেশর মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আপসহীন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিতি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, এনডিএম মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিন, দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কূটনীতিকরা। অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান জানানো হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড মেহেরপুর, আহত ১০

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১৫ প্রকৌশলীকে চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদ আইইবির

হাসপাতালে গোরখোদক মনু মিয়া, ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা

রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে: টিআইবি

শারজাহতে পারভেজ ইমনের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়

নিরাপদ ও বাসযোগ্য নগরী গড়তে সাভারে মতবিনিময় সভা

এবার আন্দোলনে নামছেন বামপন্থিরা

১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন কুড়িগ্রামের ২৯ জন

ম্যান সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপ জিতে ক্রিস্টাল প্যালেসের ইতিহাস

নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে: নয়ন

১০

কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ

১১

অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনের কথা বলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

১২

বহিষ্কারের পর সংগঠনের দুই নেতাকে লিজার আলটিমেটাম

১৩

বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

১৪

১৩ বগি ব্রিজের ওপর রেখেই চলে গেল ট্রেন

১৫

আফগানিস্তানের দিকে ভারত কেন বাড়াচ্ছে বন্ধুত্বের হাত?

১৬

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের অভিযোগ, নারী সমন্বয়ক বহিষ্কার

১৭

দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ইমনের ইতিহাস

১৮

গণঅভ্যুত্থান দমনে জড়িতদের শনাক্তের কমিটিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতারা

১৯

উৎসব ভাতা নিয়ে সুখবর পেলেন বেসরকারি শিক্ষকরা

২০
X