কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিবন্ধন ফিরে পেলেও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক কীভাবে পেতে পারে জামায়াত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রোববার (০১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত আদেশে বলেছেন, নিবন্ধন চেয়ে জামায়াতের যে আবেদন করা আছে, সেটিসহ অন্য কোনো বিষয় থাকলে তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি সাংবিধানিক এখতিয়ার অনুসারে) সিদ্ধান্ত নিতে।

জামায়াতে ইসলামী কীভাবে দাঁড়িপাল্লা হারায় এবং প্রতীক কীভাবে ফেরত আসতে পারে সে বিষয়ে রোববার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রার্থীদের জন্য প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দের জন্য আবেদন করে নির্বাচন কমিশনে। পরে আবেদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি বরাদ্দ দেয় জামায়াতকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জামায়াতের প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬ সালেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তখন তারা বলেছে, এটা তাদের অনেক পুরানো প্রতীক। ১৯৭০ সালেও এ প্রতীকেই ভোট করেছিল। ইসি তখন এই প্রতীক বহাল রেখেছিল।

এরপরে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে টানা আরও পাঁচটি সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। কখনো জোটবদ্ধভাবে, আবার কখনো স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি।

নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে যখন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু করেছিল তখনও চাহিদা অনুযায়ী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হয়েছিল জামায়াতকে। হাইকোর্টে এক রিটের আদেশে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।

২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যদি কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ওই বরাদ্দ বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয় নির্বাচন কমিশনকে।

এ বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, তখন একটা ভিন্ন এজেন্ডাকে সামনে নিয়ে কাজটা করা হয়েছিল। ফুলকোর্ট সভার স্টাটাস হলো- প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এটা কোনো বিচারিক সিদ্ধান্ত না।

তখন উচ্চ আদালতের চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৯ই মার্চ ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। এতে নির্বাচনে দল বা প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ হয়ে যায়।

প্রতীক ফেরত আসতে পারে কীভাবে?

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। একই সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে ইসিতে একটি আবেদন দেয় জামায়াত। সেখানে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার বিষয়ে আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ চায় দলটি।

এ বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু তখনকার ইসি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরেই প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দিয়ে দেয়। সে জন্য আমরা আপিল বিভাগের কাছে একটা পর্যবেক্ষণ চেয়েছিলাম।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দলটির নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রতীকের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহেদ ইকবাল বলেন, এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো আদালতে না গড়ানোই ভালো ছিল।

এখন জামায়াতকে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে, সে বিষয়ে প্রশ্ন সামনে আসছে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন বলেন, কোর্টের যে আদেশ থাকবে তার প্রেক্ষিতে বিধিমালাতে এটা অন্তর্ভুক্ত করবে ইসি। বিধিমালায় যুক্ত করার পর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে ইসি। ভেটিং শেষে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত এলেই নির্বাচন কমিশন গেজেট করতে পারবে।

তবে ঠিক কতদিন সময় লাগবে সেটি এখনই বলছে না নির্বাচন কমিশন। কমিশন বলছে, আদালতের আদেশের সার্টিফাইড কপি এলেই প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে ইসি।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, আইন বা বিধিতে যা আছে সে অনুযায়ী সব সিদ্ধান্ত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১ যুগের নতুন দিগন্তে কুবিসাস

তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি : আমীর খসরু 

দুর্যোগ মোকাবিলায় স্কাউটদের ভূমিকা অনন্য : শিক্ষা উপদেষ্টা

আইজিপি বাহারুলকে বরখাস্তের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে আইনজীবীর চিঠি

নেইমারের বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে নতুন তথ্য জানালেন আনচেলত্তি

ভারতে আজহারির নামে ‘মাহফিলের’ প্রচারণা, যা জানা গেল

পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

অতিরিক্ত খাওয়া থামানোর সহজ ১০ উপায়

ভারত বাদ, বাংলাদেশ-চীনকে নিয়ে জোটের প্রস্তাব পাকিস্তানের

ফুটবল বিশ্বকাপে ফিফার নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর বিতর্ক

১০

পাকিস্তান আফগানিস্তান সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি, নিহত ৪

১১

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে স্টোর অফিসার নিহত

১২

পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, স্থবির জনজীবন

১৩

ফিফার শান্তি পুরস্কার পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

১৪

বারবার ফোন আনলকে হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্ষতি, জানুন কীভাবে

১৫

৩৫০ মাইল দূরে বদলি, ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন শিক্ষক নেতা

১৬

সিরিয়াকে সুখবর দিল কানাডা

১৭

সীমান্তে এবারও হলো না দুই বাংলার মিলনমেলা

১৮

গ্রিভসের অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরি, ড্র করেও ‘জয়ের স্বাদ’ উইন্ডিজের

১৯

মেডিকেল বোর্ড সবুজ সংকেত দিলেই ঢাকায় আসবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

২০
X