ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আহ্বায়ক শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেছেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক দলের নেতারা জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছেন। দেশের স্বার্থে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। কিন্তু জাতীয় সরকার গঠনের আগে অর্থবহ জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এ জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এনপিপির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পরে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই সরকারের কাছে জনগণের অনেক আশা-ভরসা ছিল। অনেকগুলো সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশ একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করত। কিন্তু বর্তমানে ওই আন্দোলনের যে চালিকাশক্তি, তার মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। তারা ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা করে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে জনগণ হতাশ। সারা বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের পরিবর্তে মবতন্ত্র চলছে। জনগণ এর থেকে মুক্তি চায়।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনপিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘দ্রুত সংস্কার ও জুলাই সনদ দিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করে।’
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘২০০৭ সালের এই দিনে মরহুম শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এনপিপি। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে দলটি ১৮ বছর পার করে আজ ১৯ বছরে পদার্পণ করল। এনপিপি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, ‘সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অতিসত্বর নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয় ঐক্যের বিপরীতে বিভাজন ফ্যাসিবাদকে আবার পুনর্বাসিত করবে।’
গোলাম সারোয়ার মিলন আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের কারণে বিদ্যমান অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়বে। এটা হলে জুলাই শহীদদের প্রতি শুধু বিশ্বাসঘাতকতাই নয়, গণতন্ত্রে উত্তরণের পরিবর্তে বাংলাদেশ হবে বিদেশি শক্তির স্বার্থ হাসিলের উর্বর স্থান। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অনেক নিবন্ধিত দলকে বাদ দিয়ে আলোচনা করছে। নবগঠিত অনেক দল যারা অতীতে রাষ্ট্র গঠনে সফল ভূমিকা রেখেছে, তাদেরও আলোচনায় ডাকছে না। অবশ্য এই সরকার বিগত দিনগুলোতে আলোচনার সংস্কৃতি তৈরি করে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকারকে পরামর্শ দেবো, যারা আলোচনায় ছিলেন না, তাদের ডেকে কথা বলে শক্তিশালী কার্যকর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করুন।’
এনপিপির সদস্যসচিব আনিসুর রহমান দেওয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংস্কার জোটের নির্বাহী আহ্বায়ক মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, এনপিপির যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মন্ডল, সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, মো. ইমরুল কায়েস, জনতার পার্টি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, জাগপার (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান, ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, এনপিপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি মো. এমাদুল হক রানা, ন্যাশনাল পিপলস শ্রমিক পার্টির সভাপতি আবুল কালাম জুয়েল, ন্যাশনাল পিপলস যুব পার্টির সভাপতি তারিকূল ইসলাম সুমন প্রমুখ।
এ সময় জাগপার (একাংশ) সভাপতি একেএম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বাবলু, এনপিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মর্জিনা খান আঞ্জু, ডা. মো. আলতাফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল ইসলাম খোকন, জিয়া জামান খান প্রিন্স, ন্যাশনাল পিপলস স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাহেব আলী হাওলাদার রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন