কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৩ এএম
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পুরোনো বন্দোবস্ত ফের জায়গা করে নিতে যাচ্ছে : সাকি  

বক্তব্য রাখছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ছবি : কালবেলা
বক্তব্য রাখছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ছবি : কালবেলা

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘বারবার শহীদের কথা বলি, কারণ পুরোনো বন্দোবস্ত জায়গা করে নেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ন্যায়বিচার হতে হবে আমাদের এই রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ।’

সোমবার (৪ আগস্ট) ঢাকার মিরপুর-১০ আইডিয়াল গার্লস স্কুলের পাশে সমাবেশ, মোমবাতি প্রজ্বালন, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কথা ছিল, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলো হাহাকার করে বিচার প্রক্রিয়া কতদূর ভেবে। একটা রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র হয়ে উঠছে কি না, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারছে কি না, তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার দেওয়ার সক্ষমতা ওপর।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শহীদ এবং যারা আহত, তারা এই জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন, আমাদের দেশের মানুষ মৃত নয়, তারা অন্যায়ের বিরোধিতা করে ও শেষ পর্যন্ত লড়াই করে খুনিদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে আমাদের গৌরবান্বিত করতে পারে।’

সাকি বলেন, ‘যখন মিরপুর-১০ দখল হয়ে গিয়েছিল, তখন অন্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে শহীদ শাকিলরা জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রতিরোধ সমরে খালি হাতে লড়াই সংগঠিত করেছিলেন তারা। আওয়ামী পুলিশ ও গুন্ডাবাহিনী সশস্ত্রভাবে একসঙ্গে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেখানে। ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তিন দিন কোমায় থাকার পর শহীদ শাকিল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবান্বিত কাজটি শহীদ জুলফিকার শাকিল করে গিয়েছেন। ছাত্র ফেডারেশন যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন এই সংগঠনকে শহীদ শাকিল যুগে যুগে গৌরবান্বিত করে যাবেন। শহীদ শাকিলের চৈতন্য, সততা, দেশপ্রেম এবং এই দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে ধারণ করার অঙ্গীকারকে ধারণ করা ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিটি নেতাকর্মী, সদস্যের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের কোনো শহীদের মামলা ও তার বিচারকে রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে ফেলতে আমরা দেব না। আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার ও ন্যায়বিচার চাই। এই ন্যায়বিচার হবে আমাদের এই রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ।’

সাকি অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল ও কর্মকর্তা বাড়িয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগোনোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জনগণ ও শহীদ পরিবার দেখতে চায়, নির্বাচনের আগেই বিচার প্রক্রিয়া যথার্থভাবে শুরু হয়েছে৷’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সবার আগে কর্তব্য ছিল শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে বড় মাহেন্দ্রক্ষণ ৫ আগস্ট আবার আসছে। আমরা এখনো জানি না, শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাবো কি না, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখব কি না, তাদের পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া নিশ্চিত হবে কি না, সব আহতের চিকিৎসা ও জীবনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে, সেটা দেখব কি না। এটা এই সরকারের ব্যর্থতা।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জুলাই-আগস্ট মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচির শেষ দিনে মিরপুরে এই আয়োজনে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘শহীদ জুলফিকার শাকিল নিজেকে বহু আগে থেকেই এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছিলেন। লড়াই চলাকালে শহীদ শাকিলের লেখা কবিতা পড়লে মনে হয়, তিনি তার আত্মাহুতিকে নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন। যে কারণে শাকিলরা এভাবে জীবন দিয়ে গেলেন, সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা শপথ করেছি। শহীদ শাকিলরা জীবন দিয়ে জীবনকে অতিক্রম করেছেন। সব শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। আহত ও শহীদ পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নিতে হবে।’

শহীদ শাকিলের স্কুল ‘আমাদের পাঠশালা’র প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মতো যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলেই আমরা গণঅভ্যুত্থানে মানুষের বিজয় দেখেছি।’

দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মাহবুব রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, মিরপুর পল্লবী থানার সদস্যসচিব প্রদীপ রায় প্রমুখ।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের নেতা ইয়াসিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলীফ দেওয়ান ও সৈকত মল্লিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য হাসান আশরাফ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরী; বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইরান ও আশরাফুল আলম সোহেল, ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাঁকন বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

১০

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

১১

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

১২

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

১৩

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১৪

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১৫

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৬

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৭

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৮

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

১৯

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

২০
X