বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারকে ‘না’ জানিয়ে দিয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত অনৈতিক কাজ করছে। দেশের সবচেয়ে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ এবং আটক সকল নেতাকর্মীরা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেকোনো মূল্যে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর পূর্বে সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রামপুরা এবং কমলাপুর থেকে দুইটি গণিমিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়। সেখানে জমায়েত হয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। এসময় বৃষ্টি শুরু হলেও নেতাকর্মীরা ভিজে ভিজেই দলের মহাসচিবের বক্তব্য শুনতে থাকেন এবং স্লোগান দেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিকেল ৫টার দিকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে গণমিছিল পুরো নয়াপল্টনের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির গণমিছিলটি রামপুরাস্থ বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-মালিবাগ মোড়-শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়-নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। অন্যদিকে দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ- ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
মির্জা ফখরুল সংক্ষিপ্ত বক্ত্যবে বলেন, এই সরকার আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিলেও জনগণ রাজপথে যে আওয়াজ তুলছে তাতে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তারা অনেক ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন- ‘দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হতে পারে’। এই কথার জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে, আর দোষ চাপায় বিরোধীদলের নেতাদের ওপর। এ জন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতী দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সবাইকে বুকে সাহস আর শক্তি নিয়ে রাস্তায় নেমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে। আপনারা বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করতেছেন। আরো কষ্ট হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তার অধীনে নির্বাচন করে দেশে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ। সবাইকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসটিব।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্তি পাননি। তিনি মুক্তি না পেলে কে মুক্তি পেল তাতে কোনো লাভ লোকসান নেই। সবাই রাস্তায় নামলে পুলিশ এতো মানুষকে গুলি করার সাহস পাবে না। যতই চাপার জোরে সরকার বলুক না কেনো? নির্বাচন হলে শেখ হাসিনাকে নেমেই নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এতো রক্তদান কি বৃথা যাবে? নেতাকর্মীরা বলেন, না। শেখ হাসিনার সকল প্রচেষ্টা এখন বৃথা যাবে। সারা বিশ্বে বৃথা হয়ে ভারত গেছেন। কি আনবেন? ঘোড়ার ডিম আনবেন।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, রকিকুল ইসলাম বকুল, শামা ওবায়েদ, এমরান সালেহ প্রিন্স, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, কৃষকদলের মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক মো. শামসুল আলম, অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন