আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার এই নির্বাচন সামনে রেখে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। তপশিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয়তাবাদী দলটি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই শুরু করেছেন। বিভিন্ন উইং থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে আসনভিত্তিক মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, আপাতত ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে তরুণদের বেশি সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটির হাইকমান্ড। বাকি আসনগুলোতে ‘জোট’ বা ‘সমঝোতার’ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হয়তো প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রাখা হবে। আবার মিত্রদের কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মৌখিক আশ্বাসও দেওয়া হতে পারে। তবে তপশিল ঘোষণার পরই ‘জোট’ বা ‘সমঝোতা’ যেটিই হোক না কেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, এবার প্রার্থী মনোনয়নে বড় ধরনের চমক দেখা যেতে পারে। তার ভাষায়, কিছু আসনে এমন প্রার্থী দেওয়া হবে, যাদের নাম অনেকের কল্পনার মধ্যেও ছিল না। আবার অনেক সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ, যোগ্য এবং সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বেছে নেবেন। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপকর্মের অভিযোগ আছে বা যারা মাঠপর্যায়ে অগ্রহণযোগ্য, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে বিএনপি এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিস্তারিত তথ্য অনেক আগেই জমা রয়েছে।
তপশিলের আগে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাও স্বীকার করেছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তাই দলের সিদ্ধান্তেও পরিবর্তন আসছে। সব ধরনের হিসাবনিকাশ শেষ করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
নেতাদের মতে, একক প্রার্থীর নেতৃত্বে দলীয় অবস্থান সুসংহত করা এবং জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, তপশিলের পর প্রার্থী ঘোষণা করলে আসনভিত্তিক জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হওয়ার কারণে গত ১৫ বছরে বিএনপি কার্যত ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে ছিল। এই দীর্ঘ বিরতির কারণে এবার প্রায় প্রতিটি আসনেই বহু প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন, যা স্বাভাবিক। তবে ভোটের আগমুহূর্তে এর ফলে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং তৈরি হয়ে তা দল এবং ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তপশিলের আগেই অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের আশা, এতে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় অংশ নেবেন।
তথ্যসূত্র : যুগান্তর
মন্তব্য করুন