দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, শারীরিক সক্ষমতা থাকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাতে নিশ্চয়ই কিছু ভূমিকা রাখবেন বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও কথা বলেন তিনি।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিবিসি বাংলায় তারেক রহমানের এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন কি না, বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা বা পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এবারও আপনাদের সবার চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার ওপর অত্যাচারের খড়্গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু তিনি আপস করেননি। এ রকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন, কীভাবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন? মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।’
‘আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন, কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার, আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই যে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, শারীরিক সক্ষমতা থাকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাতে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।’
বিবিসি বাংলা তারেক রহমানের কাছে জানতে চায়, সেটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে কি না? এর উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। তার শারীরিক অ্যাবিলিটির (সক্ষমতা) ওপর বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।’
বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন, বিষয়টিকে আমি একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম ও সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয়, তখন সে ভালোও করে, খারাপও করে। একজন আইনজীবীর সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় মা-বাবার মতো ভালো আইনজীবী হয় অথবা হয় না। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান রাজনীতিতে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে, কেউ কেউ ভালো করতে পারেনি।’
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনীতি যারা করেন, বিগত ১৭ বছরে যেমন দেখা গেছে, তার আগেও দেখা গেছে, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের (হয়রানির শিকার হন। মিথ্যা মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতা-কর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জেল-জুলুম খেটেছে, তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যে কয়টা উদাহরণ দিলাম, আপনি কি বলতে পারবেন এর কোনোটার মধ্য দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রতিটি স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল-জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভেতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ জন্য এ কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ (সংগঠিত) করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে, সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময়, পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দেবে।’
তারেক রহমানের স্ত্রী, কন্যা বা পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা আছে কি না বা তারা রজনীতিতে আসতে আগ্রহী কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারেক রহমান।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন