রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা এটার উত্তর দেব না। কালকে দিয়ে দিয়েছি।’
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এটার উত্তর দেব না। কালকে উত্তর দিয়ে দিয়েছি। আমি আপনাদের একটাই অনুরোধ করব সব সময়, আমরা সবাই তো এ দেশের মানুষ। আমাদের প্রত্যেকেরই এই দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব আছে। আপনারা সাংবাদিক, স্বাভাবিকভাবেই স্কুপ নিউজ খুঁজবেন। বাট এট দ্য সেম টাইম সেই বিষয়টাকে আমরা ডাইভার্ট করব না, যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এর আগে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিট্যান্সপ্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কী ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে।’
মূল্য স্ফিতির প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, ‘২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯.৮ শতাংশ, যা ২০২৩- এর আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২.১ শতাংশ। অর্থাৎ ১ বছরের মাথায় ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।’
দেশে প্রবাসী আয় কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্সের বিপর্যয় আরও গভীর হয়েছে। টানা ৩ মাস ধরে এ আয় কমেছে। ৪১ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৪ কোটি ডলার। গত ৩ বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বরে একক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি মাসে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকরা। আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই’।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেন বিএনপি মহাসচিব। পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের খবরকে ‘গুজব’ দাবি করে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা। গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন