বর্তমান সরকারকে ‘ডামি সরকার’ আখ্যা দিয়ে ডামি আন্দোলন করে এদের পতন ঘটানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে পারেনি, এটার দায় আমাদের সবার।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন রাশেদ। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ আটক সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংগঠনটির তিতুমীর কলেজ শাখার উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।
মো. রাশেদ খাঁন বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বয়কট করেছে। সুতরাং এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৯৯০ সালে সমস্ত রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ-জামায়াত-জাতীয় পার্টি যুগপৎ আন্দোলন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য সবাইকে এককাতারে আনতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত যদি আমরা বিভেদ ভুলে রাজপথে একতাবদ্ধ হয়ে নামতে না পারি, তাহলে যুগের পর যুগ এই ফ্যাসিবাদ সরকার ক্ষমতায় থেকে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ব্যর্থতার জন্য জনগণকে ভুক্তভোগী হতে হবে, জনগণ যার জন্য দলগুলোর কাছে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। সুতরাং দেশের জনগণের মুক্তি ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে ৬ মাস ধরে কনডেম সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারণ, সে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র ঐক্যের আহ্বান করেছিল।
রাশেদ খাঁন বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ তার সক্ষমতা অনুযায়ী গত ২৮ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমরা জাতিকে কথা দিয়েছিলাম, আন্দোলন সফল না হলে ঘরে ফিরে যাব না। ঠিক এখন বলছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি। আপনারা রাজপথে নামুন, অবশ্যই এই আন্দোলন সফল হবে এবং জনগণের মুক্তি মিলবে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জনগণকে নামতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আন্দোলন সফল হয়নি।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, কারাগারে এক লাখের বেশি মানুষ আটক রয়েছে। আমরা কতজনের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামব? আমাদের এই অবৈধ সরকারকে পতনের আন্দোলন করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে কারাগারে আটক সকল রাজবন্দিই মুক্তি পাবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, বর্তমান সময়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক সাধারণ মানুষ। ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বংশাল থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় বডি বিল্ডার ফারুকের। ফারুকের স্ত্রীর অভিযোগ তার স্বামীর মুক্তির জন্য অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয় পুলিশ। এ ছাড়াও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে উঠে এসেছে ২০১৯ সালে রাজিব ধর রাজু নামে একজনের নির্যাতন। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে সাম্প্রতিক সময়ে সাজা দিয়েছেন আদালত, যে মামলাগুলোর বাদী পুলিশ নিজেই।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এই সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
ছাত্র অধিকার পরিষদের তিতুমীর কলেজ শাখার সভাপতি আফতাব মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন, নেওয়াজ খান বাপ্পী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আলম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সম্রাট প্রমুখ।
মন্তব্য করুন