আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ সরকারের উদ্দেশে কী বার্তা দেবে, তা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বার্তার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে তারা এখন আন্দোলনে নেমেছে। জনগণের অধিকার হরণকারী, লুটেরা ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ঢাকায় মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে। এটা এখন দেশের জনগণের সমাবেশ। এখান থেকে আমরা বার্তা দিতে চাই, অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
আরও পড়ুন : নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের কারণ জানাল তদন্ত কমিটি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মহাসমাবেশ কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি। গত ১৪-১৫ বছর ধরে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছে। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা দেশের মানুষ মেনে নিয়েছিল এবং সংবিধানে সেটা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সরকার সেটি আদালতকে ব্যবহার করে বাতিল করেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে বলা হয়েছে, পরবর্তী দুটি নির্বাচন দেশের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে। আসলে এই সরকার অবৈধ অনির্বাচিত। যার প্রমাণ ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন। ২০১৮ সালেও তারা একতরফাভাবে নির্বাচন করেছে। এভাবে তারা দেশের গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, মানবাধিকার সবকিছু ধ্বংস করেছে। গুম-খুন মানুষ হত্যা এই সরকারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে ফের গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এভাবে হয়রানি করছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা ধ্বংস করেছে।
আরও পড়ুন : হঠাৎ সচিবদের নিয়ে বৈঠক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের
তিনি বলেন, দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থেই ফ্যাসিস্ট দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু অবৈধ সরকার ভালোভাবে জানে তারা অবৈধ। তারা টিকে থাকার জন্য মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তারা আমাদের কথা বলা ও লেখার অধিকার হরণ করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের মন্ত্রী এমপিরা যে ভাষায় কথা বলে তা কোনো ভাষা হতে পারে না। তবে জনগণ এবার রুখে দাঁড়াচ্ছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে। যুগপতের বাইরেও অনেক দল আছে যারা বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সে জন্যই আমরা ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় মহাসমাবেশের বিষয়ে আমরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে জানিয়েছি। আশা করি, মঙ্গলবারের মধ্যে ভেন্যুর বিষয়টি জানাতে পারব এবং কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলব- আমাদের আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। এখানে আপনাদেরও সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। কারণ আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। অথচ যুবলীগ তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে ২৭ জুলাই পুনরায় ঘোষণা করেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
আরও পড়ুন : জামায়াতের তিন কর্মসূচি ঘোষণা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামছুর রাহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাক মিয়া, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, বেনজীর আহমেদ টিটো, আবদুল খালেক, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি আফরোজা খানম রীতাসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এর আগে নেতাদের সমন্বয়ে যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মন্তব্য করুন