আরব আমিরাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রবাসীদের করণীয় বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট শারজাহতে অবস্থিত বাংলাদেশ সমিতির হলরুমে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর উদ্যোগে ও বাংলাদেশ দূতাবাস আবুধাবির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল দুবাইয়ের কনসাল জেনারেল মুহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। আমিরাত প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ আলমের পরিচালনায় সংগঠনের সহসম্পাদক মুহাম্মদ ইসমাঈলের কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বৈঠকে মূল বিষয়বস্তু নিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন সহসভাপতি এস এম মোদাচ্ছের শাহ।
এরপর দুই ঘণ্টাব্যাপী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আমিরাতের সাতটি প্রদেশ থেকে আসা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন অঙ্গনে কর্মরত কর্মকর্তারা। আলোচনায় উঠে আসে প্রবাসীদের ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা তার সমাধানকল্পে নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ, নারী কর্মীদের জন্য সেফহোম প্রতিষ্ঠা, সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও ফেক ডকুমেন্টস বন্ধ করা, প্রবাসীদের আইনকানুনের প্রতি সচেতন করতে ও অপরাধের হার কমিয়ে আনতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ও কর্মশালা, ইভেন্টের নামে নারী কর্মীদের নিয়ে এসে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করা ও ভিসা প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত দালালদের দেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তির আওতায় আনা, আমিরাতের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সব প্রবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। মুক্ত আলোচনা শেষে তার সারমর্ম উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ ইশতিয়াক আসিফ।
এ সময় রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ আমিরাত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা যেন তাদের কর্মক্ষেত্রে সুন্দর আচরণ ও সম্মানের সঙ্গে কাজ করে দেশের সম্মানকে অক্ষুণ্ন রাখেন।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি করণীয় সেটি হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। নিজেকে নিজে আইনকানুনসহ প্রতিটা বিষয়ে শুধরানো গেলে অনেকাংশে অপরাধ কমে আসবে। পাশাপাশি উপরে উল্লিখিত সমস্যার সমাধান ও তার বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এ ছাড়া তিনি অনুকূল কিংবা প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে আমিরাতের আইনকানুন মেনে চলতে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান। দেশের কল্যাণে সময় উপযোগী এ আয়োজনের জন্য প্রেসক্লাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পাশে থাকার আশা পোষণ করেন।
বিশেষ অতিথি কনসাল জেনারেল মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর এ উদ্যোগ আমিরাতে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ব্যক্তি কিংবা দল নয় সবার আগে দেশ। তাই দেশের ইতিবাচক দিক ও অগ্রগতিকে তথা দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি প্রবাসীদের প্রতি আমিরাতের স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ কমিউনিটির মাধ্যমে দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে দেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো বড় পরিসরে করা গেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমিরাতের আইনকানুন মেনে চলার আহ্বান করেন।
প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল শাহীনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন উপপরিষদের দায়িত্ব পালন করেন অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহজাহান, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মেহেদী রুবেল, আরিফ সিকদার বাপ্পি, সদস্য যথাক্রমে শামসুল হক, মোশাররফ হোসেন, মুহাম্মদ আশিক ইসলাম রেজা, মুহাম্মদ আবু শাহাদাত সায়েম, আবদুল্লাহ আল রানা ও আরফাতুল ইসলামসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিমান বাংলাদেশ, জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বিভিন্ন অঙ্গনে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সবশেষে সমাপনী বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশীদ স্মরণকালের সেরা এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রায় শতভাগ উপস্থিতির জন্য আমিরাতে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন, এই আয়োজন যেন শুধু এই কক্ষেই সীমাবদ্ধ না থাকে। আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশেও যেন সাধারণ প্রবাসীদের নিয়ে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখের সারথি হয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। পাশাপাশি সুন্দর আয়োজনের জন্য আমিরাত সরকার অনুমতি দেওয়ায় আমিরাত প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া সবাইকে আমিরাতের আইনকানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন